চার যুবকের কল্যাণে বেঁচে গেল পাগলি ও তার সন্তান
চার যুবকের অবদানে দিন দিন সুস্থ হয়ে উঠছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় মাঠের মধ্যে সন্তান প্রসব করা মানসিক ভারসাম্যীন সালমা পাগলি ও তার সন্তান। গত তিন দিন ধরে তাদের ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সব ধরনের সহযোগিতায় এখন অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে ওই নারী। ইতোমধ্যে তার সন্তানের নাম রাখা হয়েছে জান্নাতুল হাবিবা হুমাইরা।
এদিকে হাসপাতালের বিছানায় মানসিক ভারসাম্যহীন সালমা পাগলির সন্তানের প্রতি মমত্ব দেখে রীতিমতো অবাক তাকে দেখতে আসা লোকজন।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত নয়টায় মাদারীপুরে শিবচর উপজেলার হাতির বাগান বালুর মাঠে এ ঘটনা। অপরদিকে শিশুটি ভূমিষ্ট হওয়ার তিন ঘণ্টা পর ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর।
এলাকাবাসী ও চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন সালমা পাগলিকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখে মনে হয় তিনি সুস্থ স্বাভাবিক একজন মা।
সালমার সন্তানের জন্ম কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে নয়, তিনি একাই কন্যা সন্তান প্রসব করেন বালুর মধ্যে। সন্তান প্রসব করার পর পড়নের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে চিৎকার করছিলেন মাঠের এক প্রান্তে বসে। এসময় চার বন্ধু জাহিদ হাসান অমি, সাগর, ইব্রাহিম ও আজিজ তার চিৎকারে ছুটে আসেন সেখানে।
এসেই দেখেন সন্তানকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী। তখন অন্ধকারে পরিষ্কার কিছু দেখা যাচ্ছিল না। মোবাইলের অালোতে তারা দেখতে পায় ভূমিষ্ট শিশুটির নাড়ি লেগে রয়েছে মায়ের নাড়ির সঙ্গে। মায়ের নাড়ির সঙ্গে বাঁধা শিশুটিকে কীভাবে বিছিন্ন করতে হবে সেটা না জানা থাকায় তারা দ্রুত একজন ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর নাড় কেটে শিশুকে আলাদা করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
এলাকাবাসী জানান, ছয়-সাত মাস আগে থেকেই ঠিকানা ও পরিচয়হীন সালমা পাগলিকে শিবচর বাজারের আনাচে-কানাচে ঘুরতে দেখা গেছে। কিন্তু সন্তান প্রসব করার আগের দিন পর্যন্ত কেউ বুঝতেই পারেনি যে সে অন্তঃসত্ত্বা।
৪ যুবকের একজন জাহিদ হাসান অমি জানান, আমরা চার বন্ধু মিলে নবজাতকের নাম রেখেছি ‘জান্নাতুল হাবিবা হুমাইরা’। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সালমা ও মেয়ে হুমাইরা বর্তমানে সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে। ওদের চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তাররা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমত চিকিৎসা প্রদান করছেন।
সালমা পাগলি জানালেন, আমি তো পাগল না, ওরা খালি খালি ইট মারে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আবু জাফর জানান, প্রসূতি সালমা ও তার নবজাতক শিশুটি হাসাপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছে। দুই জনই এখন সুস্থ।
মাদারীপুর জেলা পরিষদের আয়শা সিদ্দিকা জানান, খবর শুনে আমি তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি শিশুটির দেহ রক্ত আর বালুতে জড়ানো। প্রসূতি মা সালমা পাগলি ও তার সন্তাকে যারা হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছে তারা মানবতাকে জয় করেছেন।
শিবচর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা জানান, ভূমিষ্ট হওয়া শিশুকে নেয়ার জন্য অনেকই দাবি জানাচ্ছেন। কিন্ত শিশুটির ভবিষ্যত চিন্তা করে তাকে অন্যত্র লালন পালনের ব্যবস্থা করা উত্তম হবে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরান আমেদ জানান, পিতৃপরিচয়হীন সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব সরকারের।
একে এম নাসিরুল হক/এমএএস/আইআই