শিক্ষক প্রাইমারির, পরিচয় দেন বিসিএস ক্যাডার
হবিগঞ্জে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিসিএস (ট্যাক্স) ক্যাডার হিসেবে সুপারিশকৃত হয়েছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। এ নিয়ে নিজের স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করে নিয়েছেন সংবর্ধনা। প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি থেকেও সংবর্ধনা নিয়েছেন। ফেসবুকে বন্ধুদের মাধ্যমে বিসিএস (ট্যাক্স) ক্যাডার হিসেবে বেশ প্রচারণাও চালিয়েছেন।
জেলার বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের বানিয়াগাঁও গ্রামের শ্যামল রঞ্জন দের ছেলে রনি রঞ্জন দে এমন প্রতারণামূলক প্রচারণা চালিয়েছেন। একটি দেবোত্তর সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তিনি এমন প্রচারণা চালান বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। রনি স্থানীয় ভুগলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
অবশেষে যখন প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেল তখন মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন রনি। কারও সাথেই তেমন একটি যোগাযোগ রাখছেন না। এমনকি পরিবারের সঙ্গেও তেমন কোনো যোগাযোগ হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন তার বাবা শ্যামল রঞ্জন দে।
তিনি জানান, কী উদ্দেশ্যে তার ছেলে এমন প্রতারণা করেছে সেটি তিনি জানেন না। এটি অপ্রত্যাশিত। একজন শিক্ষক হিসেবে তার এটি করা উচিত হয়নি।
শ্যামল রঞ্জন দে বলেন, আমি বাড়িতে খুব একটা থাকি না। বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকি। ছেলে বলেছে ঢাকা গেছে। আমি যতটুকু জানি নন-ক্যাডার হিসেবে তালিকায় তার রোল নাম্বার রয়েছে। তবে ক্যাডার হয়নি। তার সংবর্ধনা নেয়ার বিষয়টিও আমি জানি না।
উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জানান, বিসিএস (ট্যাক্স) ক্যাডার হিসেবে রনি নির্বাচিত হয়েছেন এলাকায় এমনটি প্রচার হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টির সত্য-মিথ্যা আমরা জানি না। যাচাইও করিনি। বেশ কয়েকটি সংগঠন সংবর্ধনা দিয়েছে, আমরাও দিয়েছি। পরে যখন বিষয়টি জানতে পারলাম তিনি প্রতারণা করেছেন তখন আমরা খুব লজ্জা পেয়েছি। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা এমনটি প্রত্যাশা করিনি। এখন তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না।
ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, তার বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের মাঝে রনিসহ ৩ জন বিসিএস ক্যাডার হয়েছে বলে তিনি শুনেছিলেন। অন্য দু’জনের সঙ্গে নিজে বিসিএস (ট্যাক্স) ক্যাডার হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বলে এলাকায় প্রচারণা চালায় রনি। সামাজিকভাবে সবাই এটি জানে। এজন্য তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারি রনি বিসিএস ক্যাডার হিসেবে মনোনীত হননি। এখন তিনি ফোনও ধরছেন না। অধিকাংশ সময়ই ফোন বন্ধ রাখেন। বারবার চেষ্টা করলেও তিনি কারও ফোন ধরছেন না। আমার ছাত্র সে কথা বাদই দিলাম একজন শিক্ষক হিসেবে যদি এমন প্রতারণা করে তা কিভাবে বিশ্বাস করি। আমি মর্মাহত হয়েছি। কারণ আমি তাকে সংবর্ধনা দিয়েছি। আমার বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে বার বার চেষ্টা করেও রনির মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এর ওয়েবসাইটে দেয়া ফলাফল থেকে জানা যায়, ৩৬তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য ২৩২৩ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে কোথাও রনি রঞ্জন দের রোল নাম্বার ৬০২০৯০ নেই। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আরও ৩৩০৮ জনের রোল নাম্বারের তালিকাও প্রকাশ করা হয়।
যাদের ক্ষেত্রে বলা হয়, বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। তাদের নন ক্যাডার হিসেবে মেধাক্রম ও প্রচলিত কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগের জন্য চেষ্টা করা হবে। তবে নিয়োগের কোনো নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে না। এ তালিকায় অবশ্য তার রোল নাম্বারটি পাওয়া গেছে।
এটিকে পূঁজি করেই রনি এলাকায় বিসিএস (ট্যাক্স) ক্যাডার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বলে প্রচারণা চালিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় একটি দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে একটি সংগঠনের সঙ্গে তাদের বিরোধ রয়েছে। ওই সংগঠনের লোকজনকে ভয় দেখানোর জন্য তিনি এমন প্রচারণা চালিয়েছেন।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/আরএআর/জেআইএম