বি. বাড়িয়ায় হাসপাতাল ভাঙচুর : দ্রুত বিচার আইনে মামলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার ঘটনায় অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত ) ডা. মো. আবু সাঈদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার নাটাই ইউনিয়নের দারোগা বাড়ির আবুল কালাম আজাদের ছেলে নিলয় (০৬) বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিলয়কে ঢাকায় পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর নিলয়কে জেলা সদর হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিলয় মারা যায়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর স্বজনসহ অজ্ঞাত ৩০-৪০ জন দুষ্কৃতিকারী হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুর করে। এরপর তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এতে হাসপাতালের প্রায় ৪-৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের পরিবারের স্বজনরা সাংবাদিকদের জানান, নিলয়কে সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় নেওয়ার জন্য হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর পর অ্যাম্বুলেন্স চালক হুমায়ূন কবির ঢাকায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করে চলে যান। এরপর অন্য একটি বেরসারকারি অ্যাম্বুলেন্সে নিলয়কে উঠানোর পর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিলয় মারা যায়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে পুলিশের এক এসআইসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রানা নুরুস শামসকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শাহজাহান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সোহরাব মিয়া।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. রানা নুরুস শামস জাগো নিউজকে জানান, আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে। অভিযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স চালক হুমায়ূন কবির তার লিখিত বক্তব্য আমাদের কাছে জমা দিয়েছেন। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে জেলা সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সকলকে আইনের আতওয়া আনা হবে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলাটি দ্রুত বিচার আইন-২০০২ এর ৪/৫ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
আজিজুল আলম সঞ্চয়/এসএস/পিআর