টমেটোর কেজি ৫ টাকা
টমেটোর দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় বাম্পার ফলনের আনন্দ বেদনায় রূপ নিয়েছে শরীয়তপুরের জেলার প্রায় ৪ হাজার চাষির। বর্তমানে চাষিরা প্রতি কেজি টমেটো খেত থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন পাঁচ টাকায়।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার জাজিরা, গোসাইরহাট, ডামুড্যা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও সদর উপজেলায় প্রায় ২ হাজার ২৮৫ একর জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে টমেটোর ফলন বাম্পার হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৫০ হেক্টর নির্ধারণ করলেও ফলন হয়েছে ৯১৪ হেক্টর। লক্ষমাত্রার চেয়ে ১৬৪ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে।
জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় কিছু কিছু মাঠে এখন ধানের চারা লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে টমেটো সংরক্ষণাগার না থাকায় খেত থেকেই চাষিরা টমেটো কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে বাম্পার ফলন হলেও কম দাম পাচ্ছেন চাষিরা। ফলে টমেটো চাষ করে লসে পড়তে হচ্ছে চাষিদের।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস ধরে জমি থেকে টমেটোর তোলা শুরু হয়েছে। প্রথম সপ্তাহে দাম কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা করে পাওয়ায় খুশি ছিল চাষিরা। কিন্তু পরের সপ্তাহে ১২ টাকা, এরপর ৮ টাকায় নেমে আসে। বর্তমানে টমেটোর দাম পাঁচ টাকা ও উন্নতমানের টমেটো সর্বোচ্চ সাত টাকায় নেমে গেছে। চাষিরা নামমাত্র মূল্যে টমেটো বিক্রি করছেন। এতে টমেটো বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
জাজিরা উপজেলার কৃষক আনোয়ার মুন্সী বলেন, মঙ্গলবার খেত থেকে পাঁচ টাকা করে টমেটো বেচতাছি। ধান লাগাইতে টাকা লাগবো, তাই কম দামে বেচন ছাড়া উপায় নাই।
একই উপজেলার উত্তর কেবলনগর গ্রামের মকবুল খাঁ জানান, টমেটো চাষ করে ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু ভালো দাম পাচ্ছি না। কিস্তিতে টাকা তুলে অন্যের দেড় বিঘা জমি ধার নিয়ে টমেটো চাষ করেছি। টমেটো ভালো হয়েছিল। কিন্তু টমেটোর দাম খুবই কম। মনে হচ্ছে টমেটো বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। বড়ই চিন্তায় আছি।
ডামুড্যা বাজার খুচরা ব্যবসায়ী খোকন সরদার বলেন, প্রায় গত দেড় মাস আগে পাইকারদের থেকে ২৫-৩০ টাকা করে টমেটো কিনতে হতো। আর খরচ বাদ দিয়ে খুচরা বিক্রি করতাম ৩৫-৪০ টাকায়। আর এখন ৫-৭ টাকায় কিনে বিক্রি করছি ১২ থেকে ১৬ টাকায়। আগের চেয়ে টমেটোর দাম অনেক কমে গেছে।
ডামুড্যা বাজারের টমেটো ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন বলেন, বর্তমানে কৃষকদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায় প্রতি মণ টমেটো কিনতে হচ্ছে। প্রতি মণে যাতায়াত খরচ রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক মণ টমেটো কিনে খরচসহ পড়ছে প্রায় ২৮০ টাকা। আর খুচরা বিক্রি করছি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক মো. রিফাতুল হোসাইন বলেন, চলতি বছর পর্যাপ্ত সার ও অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে না। আমাদের পরামর্শ হল, যদি স্থানীয়ভাবে টমেটো সংরক্ষনাগার করা যায়, অথবা চাষিদের সংরক্ষণ প্রযুক্তিটা বুঝাতে পারা যায় বা সংরক্ষণ করে কিছুদিন পরে বিক্রি করতে পারলে চাষিদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত কোনো আগ্রহী ব্যক্তি টমেটো প্রসেসিং করার জন্য যদি বিভিন্ন খাবার তৈরি করার জন্য এগিয়ে আসেন, তবে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মো. ছগির হোসেন/এএম/এমএস