তুলে দিলেন আইভী, বসার নির্দেশ শামীম ওসমানের
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে উচ্ছদ হওয়া হকারদের ফুটপাতে বসার নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। তিনি বলেছেন, আমি কাউকে অনুরোধ করতে আসি নাই। আমি সেলিম ওসমান না আমি শামীম ওসমান। আমি আমার ভাই সেলিম ওসমানের মতো ভদ্রলোক না। তাই অনুরোধ নয়, আমি নির্দেশ দিচ্ছি নারায়ণগঞ্জের হকাররা কাল থেকে ফুটপাতে বসবে।
সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করে হকারদের উঠাতে পারবেন না। তবে শামীম ওসমানের মৃত্যুর পর পারবেন। যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীদের হকারদের পাশে থাকার নির্দেশও দেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, বাংলাদেশের গরিব মানুষ না খেয়ে থাকবে সেই জন্য শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হননি। মানুষের রোজগার উঠিয়ে দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হননি, মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাই বলছি অন্যায় করবেন আপনি (আইভী) গালি খাবে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা তা নারায়ণগঞ্জের মাটিতে হবে না। গরিব মানুষের পেটে ভাত জোগানোর জন্য রাজনীতি করেন। অহংকার দাম্ভিকতা ভালো না। গরিব মানুষের কষ্টের কথা একবার ভাবেন, তারা কী অবস্থায় জীবন-যাপন করছে।
পুলিশ প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমি আইন-শৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা হিসাবে বলতে চাই হকারদের ওপর লাঠিচার্জ কিংবা অন্য কিছু করতে পারবেন না। কোনো পুলিশ লাঠিচার্জ তো দূরের কথা হকারদের গালিও দিতে পারবেন না। কারও কথায় হকারদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করবেন না। আমি আমার নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলাম নারায়ণগঞ্জের হকারদের আওয়ামী লীগের কিংবা অন্য কেউ যদি কোনো কিছু বলে তাহলে তাদেরকে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। বাকিটা আমি শামীম ওসমান দেখবো। আর হকাররা আমাকে কথা দিতে হবে- আজকের পর থেকে কাউকে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে একটি টাকাও দেবে না।
শামীম ওসমান বলেন, গরিব মানুষকে খাবার দিতে পারবেন না, কিন্তু তাদের মুখের খাবার কেড়ে নিতে পারেন। হকাররা কিন্তু কোটিপতি কিংবা ধনী হওয়ার জন্য রাস্তায় বসে ব্যবসা করেন না। তারা তাদের সন্তানদের পেটে দুই বেলা খাবার দেয়ার জন্য এবং সন্তানদের লেখাপড়া করানোর জন্য রাস্তায় নামেন। এটা কী তাদের অপরাধ। হকারদের একটাই অপরাধ তারা কাজ করে খায়, তারা ইয়াবা বিক্রি করে খায় না। যারা ইয়াবা বিক্রি করে তাদের ক্ষমতা অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, আমার ছোটবোন (আইভী) বলেছে- আমি নাকি ২৫ কোটি টাকা খরচ করেছি। দোয়া করবেন যাতে আগামীতে আমি ২৫শ’ কোটি টাকা খরচ করতে পারি। কারণ আমাদের খরচ করার মানসিকতা আছে। যদি হকারদের জন্য মার্কেট করতে হয় তাহলে সেটা সিটি কর্পোরেশন করবে। কারণ এটা তাদের দায়িত্ব। যারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের জবাব দিতে ২ মিনিটও লাগবে না। কিন্তু আল্লাহ আমাকে অনেক ধৈর্য দিয়েছেন। আল্লাহ আমাকে অনেক রহমত দিয়েছেন।
প্রতিবাদ সভায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, যুগ্ম-সম্পাদক শাহ নিজাম, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত আলম সানী, শহর সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল, সিপিবির নেতা হাফিজুল ইসলাম, হকার নেতা আসাদ, আব্দুর রহিম, পলাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ শহর ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ২৫ ডিসেম্বর হকার উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম শুরু করে। হকারদের উচ্ছেদের পর তারা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের কাছে ছুটে যান। তখন শামীম ওসমান হকারদের বলেছিলেন- এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজ। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তার নির্দেশেই পুলিশ হকারদের উচ্ছেদ করেছে।
তবে শামীম ওসমান হকারদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এমন ঘোষণা দিলেও তিনি প্রকাশ্যে মাঠে নামেননি।
শহরের দেওভোগে একটি অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন- বলে মন্তব্য করেন মেয়র আইভী। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ছেলের বিয়েতে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেন সেই ব্যক্তি হকারদের জন্য একটি জায়গা করে দিতে পারেন। মেয়র আইভীর এমন বক্তব্যে শামীম ওসমানও একটি অনুষ্ঠানে আইভীর বক্তব্যের জবাব দেন। সোমবার হকারদের জন্য প্রকাশ্যে মাঠে নেমে হকারদের বসার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে হকার ইস্যুতে গত শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী সেলিম ওসমান। ওই সময় হকাররা বিকেল ৫টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত শহরে বসার অনুরোধ করেন। তখন সেলিম ওসমান ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ বিষয়টিকে মেনে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে চিঠি দিয়ে অবহিত করবেন প্রতিশ্রুতি দেন।
রোববার মেয়রকে দেয়া চিঠিতে এমপি সেলিম ওসমান বিকেল ৫টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত ফুটপাতে হকারদের বসতে দেয়ার অনুরোধ করেন। তবে চিঠির জবাব যেটা সেলিম ওসমানকে দেয়া হয়েছে সেখানে প্রেরক ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহতেশামুল হক।
শাহাদাত হোসেন/আরএআর/আরআইপি