অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অভিভাবককে বেঁধে পেটালেন শিক্ষকরা
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া এলাকায় স্কুলের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাওয়ায় আয়াত উল্লাহ নামে এক অভিভাবককে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়েছে। রোববার সকাল ১০টায় খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার আয়াত উল্লাহর ছেলে শাহরিয়ার নাফিস আবির খরুলিয়া কেজি এ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। নাফিস প্রথম শ্রেণিতে এ প্লাস না পাওয়ায় এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের কাছে জানতে সকালে স্কুলে যান আয়াত উল্লাহ। একই সময় পূর্বঘোষণা ছাড়াই ভর্তি ও মাসিক বেতন কেন বাড়ানো হয়েছে তাও জিজ্ঞেস করেন। এ নিয়ে শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।
এ সময় পার্শ্ববর্তী খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হককে ডেকে আনেন বোরহান। শুরু হয় ত্রিমুখী তর্ক-বিতর্ক। একপর্যায়ে ঘটনাটি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। এ সময় আয়াত উল্লাহ ছিলেন একা। ‘কেন এসব জানতে চাচ্ছ' এই বলে শিক্ষক জহিরুল হক আয়াত উল্লাহকে ধাক্কা দেয়। একই সময় বোরহান উদ্দিনও তাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় মাটিতে পড়ে যান অভিভাবক আয়াত উল্লাহ।
এরপর রশি দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়। তাকে মারধর করতে থাকেন দুই শিক্ষকসহ তাদের সহযোগীরা। আয়াত উল্লাহকে লাথি মারে ও থুথু দেন শিক্ষক জহিরুল হক ও বোরহান উদ্দিন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আয়াত উল্লাহকে এমনভাবে মারা হচ্ছে যেন তিনি একজন বড় সন্ত্রাসী। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করা হলেও কোন শিক্ষক বা ছাত্রছাত্রী তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়নি। পরে তার চিৎকার শুনে স্কুলের আঙিনায় গিয়ে পৌঁছে পথচারীরা। শিক্ষক-ছাত্রদের পায়ের নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে আয়াত উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই স্কুলে প্রায় সময় অনিয়ম করা হয়। কিছুদিন আগে কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগ করা হয় খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। কেজি স্কুলে নানা অনিয়ম রয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনিয়ম করেন অনেক শিক্ষক। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।তিনি বলেন, আমার ছেলের কাঙ্খিত ফলাফল কেন হয়নি? কোন যুক্তিতে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে? জানতে চাওয়ায় আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। দুই শিক্ষকই এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে। শিক্ষক জহিরুল হক, নজিবুল্লাহ, নুরুল হকসহ আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক আমার উপর নির্যাতনে সরাসরি জড়িত।
কেন এমন ঘটনা সৃষ্টি করা হয়েছে জানতে চাওয়া হয় খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের কাছে। তিনি বলেন, আয়াত উল্লাহ আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিল। বেয়াদবি করায় তাকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে। এমনকি আর কোনদিন ‘বেয়াদবি করবে না’ মর্মে মুচলেকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে হাত-পা বেঁধে মারধর করা উচিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি ক্ষুব্ধ লোকজন ঘটিয়েছে।
অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হলেও ওপার থেকে নিজেকে বোরহান উদ্দিন নয় দাবি করে বলা হয়, ভর্তি ফি, মাসিক ফি ইত্যাদি বিষয় স্কুল পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মতে হয়। আমাদের কাছে জানতে চাওয়ায় আয়াত উল্লাহকে কমিটির কাছে যেতে বলা হয়। তাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে যান।এতটুকু উত্তর দিয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। নিজের সঠিক পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এর কিছুক্ষণ পরে একই ব্যক্তি কল করে অারেকটি মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেন, এটি বোরহান স্যারের নম্বর। কল দিলে বিস্তারিত জানবেন। কিন্তু ওই নম্বরে ফোন করেও কোন সাড়া মেলেনি। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন বলেন, শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে এমন আচরণ আশা করা যায় না। খুনের আসামি কিংবা বড় মাপের কোন অপরাধীকেও এভাবে শাস্তি দেয়ার বিধান নেই। এটি চরমভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা দরকার।
ওআর/এমআরএম