শীতের চাবুক পিঠে নিয়ে পেটের দায়ে রাস্তায়
আয়নাল হক। বাড়ি রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ পবা এলাকায়। পেশায় সবজি বিক্রেতা। শীতে জুবুথুবু হয়ে সবজি বিক্রি করছিলেন রাজশাহী নগরীর মাস্টারপাড়া সবজি বাজারে। ক্রেতাদের সঙ্গে কথার ফাঁকে কেশেই চলেছেন। জানতে চাইলে বলেন, প্রতিদিন ভোর ৩টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়। এরপর খেতে গিয়ে সবজি তুলে নামতে হয় বাজারে। সারা বছর একই কাজ ঘুরে ফিরে। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা শৈত্যপ্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া এলাকার অন্যরা বাইরে বের হচ্ছে না। কিন্তু তার বিরাম নেই। পিঠে শীতের চাবুক নিয়ে পেটের তাগিতে বের হতে হচ্ছে তাকে।
এমন গল্প এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া হাজারো শ্রমজীবী মানুষের। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে যে যার মত রাস্তায় নেমেছেন।
এদিকে রোববার তাপমাত্রার পারদ আরো এক ধাপ নিচে নেমেছে রাজশাহীতে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে রাজশাহীর আবহাওয়া অফিস। এরআগে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন থেকেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে।
কয়েকদিন ধরেই পড়ছে ঘন কুয়াশা। বেলা ১১টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমশীতল হাওয়া। এতেই কাঁপছে উত্তরের এ জনপদ। বিশেষে করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষগুলোর দুর্ভোগের অন্ত নেই।
সকালে পথের ধারে খড়-কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে ছিন্নমূল মানুষদের। নিম্ন আয়ের মানুষেরা শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকানগুলোতে। সরকারি, সেবরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন শীতার্তরা।
তবে শীতার্তদের সহায়তায় এরই মধ্যে ৫২ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক। তিনি বলেন, শীত শুরুর আগেই তারা এসব কম্বল বিতরণ করেছেন। বাদ পড়েছেন এমন লোকজন নেই বললেই চলে। তারপরও যারা পাননি তাদের শীতবস্ত্র দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শীতার্তদের পাশে বেসরকারি উদ্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এদের অনেকেই ঠান্ডাজনিত ডাইরিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, রোববার রাজশাহীতে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটিই চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তপমাত্রা। এরপর সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাত ও দিনের তাপমাত্রা কমে আসায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, জানুয়ারিতে রাজশাহী অঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ফেব্রুয়ারিতেও বয়ে যেতে পারে এক থেকে দুটি মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে মৃদু, ৮ ডিগ্রির নিচে নামলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/পিআর