কুড়িগ্রামে শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির
টানা ৪ দিনের শৈত্য প্রবাহে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষের জীবন-যাত্রা। সকালে তীব্র ঠাণ্ডায় কাজে বের হতে পারছে না মানুষ। এছাড়াও বিকেল থেকেই তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় সন্ধ্যার পরপরই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার ও দোকানপাট।
খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা। কাজে বের হতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পরেছেন শ্রমজীবী মানুষ।
এ পর্যন্ত শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলায় শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রাজারহাট উপজেলায় মারা গেছে ৩ জন। মৃতদের মধ্যে গত শুক্রবার সকালে নয়ন মনি ও বৃহস্পতিবার মীম সদর হাসপাতালে মারা যায়। বাকি ৩ জন রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টায় মধ্যে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে বলে জানায় কুড়িগাম সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জাহাঙ্গির আলম।
তিনি জানান, সদর হাসপাতালে শনিবার ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে ৩৫ জন শিশু, ডায়রিয়ায় ২০ জন ও অন্যান্য রোগে ৪৩ জন ভর্তি হয়েছে। শনিবার কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতজনিত রোগে মৃতরা হলো, রাজারহাট উপজেলার বুলবুলের মেয়ে মীম (দেড় বছর), উপজেলার চতুর্ভূজ গ্রামের আব্দুর ছাত্তারের মেয়ে দুলালী (২১ দিন), কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার খোকনের মেয়ে নয়নমনি (১ দিন), রাজারহাটের বিশ্ব দেব রায় (৩০) ও আনোয়ার হোসেন (৫৫)।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কনকনে ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ায় খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের হচ্ছে না মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে শীত কষ্টে ভুগছে শিশু, বৃদ্ধসহ নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষ। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো জনপদ। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা না মেলায় তাপমাত্রা নিম্নগামী হচ্ছে।
এ অবস্থায় শীত কাতর মানুষেরা খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় ৪২০টি চরের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীত কষ্টে ভুগছে। তীব্র ঠান্ডা ও শৈতপ্রবাহে কাজে বের হতে পারছে না কর্মজীবী মানুষেরা। দুর্ভোগ বাড়তে থাকায় বিপাকে পরেছে এসব হতদরিদ্র মানুষ।
কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মোফাখখারুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেলে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা প্রশাসকের ত্রাণ কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ৯ উপজেলায় ৫৭ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলোর বিতরণ কাজ চলছে।
নাজমুল/এমএএস/জেআইএম