ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
কিশোরগঞ্জের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি তহবিল থেকে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাওরে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে চেকের মাধ্যমে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সরকারি হিসেব থেকে ওই কর্মকর্তা ৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। বাকী ১০ কোটি টাকার চেক জব্দ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। বর্তমানে ওই কর্মকর্তা পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সেফাতুল ইসলাম যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে সেটি ঠেকাতে বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশনে চিঠি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং দুর্নীতি দমন আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পৃথক এ তিনটি চিঠি পাঠানো হয়। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার মিঠামইন উপজেলায় নতুন সেনানিবাস স্থাপন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত পাঁচ কোটি টাকার একটি চেক (কোড নং-০-০৭৪২-০০০০-৯৪০১) ৬ ডিসেম্বর ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা শিরোনামে চলতি হিসাবে (হিসাব নম্বর-৩৪১১২০০০০০২৮৪) জমা হয়। ওই দিনই ২০৬২৬৩৯ নম্বর চেকের মাধ্যমে ২ কোটি টাকা এবং ৭ ডিসেম্বর ৪১৩৫৬২১ নম্বর চেকের মাধ্যমে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা মো. সেতাফুল ইসলাম উত্তোলন করেন। এ ছাড়া আরও ৬ লাখ টাকা তপন ইন্ডাস্ট্রিজের নামে একটি হিসেবে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করেন তিনি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. সেতাফুল ইসলাম সরকারি হিসাব নম্বরে (৩৪১১২০০০০০২৮৪) ভূমি অধিগ্রহণের ৫ কোটি টাকা জমা করেন। পরে নিজেই তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কিশোরগঞ্জ শাখায় পাঁচ কোটি টাকার এমব্রোস-এ প্রাপক হিসেবে ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা, কিশোরগঞ্জ লেখা হয়। জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস থেকে সেতাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অপর একটি এলএ চেক (নম্বর-০১০৪৩৪) পাওয়া যায়। এই চেকের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বরাবর আরও ১০ কোটি টাকার এমব্রোস প্রেরণের অপেক্ষায় ছিল। এ খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে চেকটি জেলা প্রশাসন জব্দ করে। প্রতিটি এলএ কেসের বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির নামে আলাদা চেক ইস্যু হওয়ার কথা থাকলেও তা না করে সেতাফুল ইসলাম টাকা আত্মসাতের জন্য এই অভিনব কৌশল ব্যবহার করেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়াও এলএ শাখার হিসাবের ৬১টি চেকের ৮ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার সুস্পষ্ট গরমিল পাওয়া যায়।
এসব টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সেতাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তার কাছ থেকে ওই টাকা উদ্ধারে তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেফাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে- তিনি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) মামলা দায়েরসহ তদন্তের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না সেটা দেখা হবে।
নূর মোহাম্মদ/আরএআর/এমএস