মানুষ গড়ার কারিগর থেকে দেশ গড়ার কারিগর
বর্তমান সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এক সময় তিনি ছিলেন স্কুল শিক্ষক। দীর্ঘ চার দশকে নিজ হাতে গড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন। সফল হয়েছে তার শিক্ষক জীবন। শিক্ষকতাকে বিদায় জানিয়ে স্থানীয় রাজনীতির হাল ধরেন। সফলতা পেয়েছেন সেখানেও। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
আজ তার ভাগ্যের ঝুলিতে জায়গা পেতে পারে আরও একটি সাফল্য। হয়ে যেতে পারেন পূর্ণ মন্ত্রী। আগেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মঙ্গলবার তাকে বঙ্গভবনে ডাকা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মঙ্গলবার বঙ্গভবনে হয়তো পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবেই শপথ নেবেন প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মহাজোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া- ফুলতলা) আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুতেই কপাল খুলে গেছে তার। পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন তিনি। সোমবার দুপুরের পর এ খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।
বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শফিউল আলম ফোনে আমাকে জানিয়েছেন যে, মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় যেন আমি বঙ্গভবনে উপস্থিত থাকি। কেন উপস্থিত থাকতে বলেছেন তা তিনি (শফিউল আলম) প্রকাশ করেননি।
পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে কী করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব হবে সরকারের সাফল্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ মন্ত্রণালয়ের অনেক সফলতা এসেছে গত চার বছরে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই হবে আমার প্রথম কাজ।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, আমি ৩৯ বছর শিক্ষকতা শেষে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে এসেছি। সত্যিই যদি আমি পূর্ণ মন্ত্রী হই, তাহলে তা হবে আমার রাজনৈতিক জীবনে পাওয়া সবচেয়ে বড় উপহার।
১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার উলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। বাবা কালিপদ চন্দের মেজো সন্তান তিনি। তার মায়ের নাম রেনুকা বালা চন্দ। স্ত্রী ঊষা রানী চন্দও পেশায় একজন শিক্ষক। চার সন্তানের জনক নারায়ণ চন্দের তিন ছেলে ও এক মেয়ে।
১৯৬১ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ১৯৬৩ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরপরই তিনি ডুমুরিয়া সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনার ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই বিদ্যালয় থেকেই তিনি মেট্রিক পাস করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালে ডুমুরিয়া স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র চালু হয়। এর আগে এই এলাকার পরীক্ষার্থীদের খুলনা শহরে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরপরই তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তিনি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৭ সালে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ২০০৫ সালের ১১ মার্চ শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
ছাত্রজীবন শেষ করে ১৯৬৭ সালেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ১৯৮৪ সালে তিনি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৯৫ সালে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি ২০০৩ সালে গঠিত উপজেলা কমিটিতেও সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। সেই থেকে আজও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ।
বাংলাদেশে প্রথম অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলার ভাণ্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ পদে তিনি ছয় বার নির্বাচিত হন। সেই সময়কালের সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই আসনের উপ- নির্বাচনে নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোটের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আলমগীর হান্নান/আরএআর/এমএস