লিটন হত্যার এক বছর : শুরু হয়নি হত্যা মামলার বিচার
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সাবেক সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের প্রথম বর্ষপূর্তি আজ ৩১ ডিসেম্বর। ২০১৬ সালেই এই দিনে সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামে সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হলে রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) শফিকুল ইসলাম শফি জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে আদালতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী একই আসনের জাপা দলীয় সাবেক সাংসদ কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানের বিরুদ্ধে করা অস্ত্র মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। হত্যা মামলার আসামি চন্দন সরকার গ্রেফতার না হওয়ায় হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি মামলাটি গাইবান্ধা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হবে।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মনজুরুল ইসলাম লিটন এই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১ জানুয়ারি তার বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলি বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় ফেলে যাওয়া একটি ম্যাগজিনের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্যের উন্মোচন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
দেশব্যাপী আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী একই আসনের জাপা দলীয় সাবেক সাংসদ কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানকে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয়। আরও গ্রেফতার করা হয় আবদুল কাদের খানের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহিন মিয়া, মেহেদী হাসান, রানা মিয়া, গাড়ি চালক আবদুল হান্নান, তার এপিএস জোহা মিয়া ও সুবল কসাইকে। আবদুল কাদের খান নিজেই একটি অস্ত্র থানায় জমা দেন, তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একটি অস্ত্র তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় এবং তৃতীয় অস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পরে আবদুল কাদের খানের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় আরও একটি মামলা হয়।
অস্ত্র মামলায় চলতি বছরের ৯ এপ্রিল সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. মোক্তারুল আলম এবং হত্যা মামলায় ৩০ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান। চন্দন সরকার এখনও পলাতক রয়েছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে রয়েছেন। তারা সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সাংসদ লিটন হত্যা মামলায় কাদের খানসহ আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কাদের খানসহ সাতজন কারাগারে আছেন। অপর আসামি চন্দন সরকারকে সম্প্রতি ভারতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বাংলাদেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে চলতি বছরের ২২ মার্চ গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ। তিনিও গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলে সড়ক দুঘর্টনায় মারা যান।
ফলে এই আসনে আবারও উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে জাপা সমর্থিত হাফিজার রহমান প্রামাণিক ও ১৯৯৬ সালে ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা, ২০০১ সালে জামায়াতের মুহম্মদ আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ ও ২০০৮ সালে জাপা সমর্থিত আবদুল কাদের খান সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন।
সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন স্মরণে আজ রোববার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। পরিবার, দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের আয়োজনে কালোব্যাচ ধারণ, বিভিন্ন মসজিদে দোয়া, সাংসদ লিটনের সাহাবাজ গ্রামের নিজ বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে কেন্দ্রীয়, জেলা ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
রওশন আলম পাপুল/এফএ/এমএস