ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সৌদিতে নিহত ওহেদ আলীর পরিবারে চলছে শোকের মাতম

প্রকাশিত: ০৫:০৮ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৫

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জামালপুরের ওহেদ আলীর পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। মাত্র তিন মাস আগে ধার দেনা করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন নিয়ে সৌদি পাড়ি জমায় ওহেদ আলী। কিন্তু ওহেদের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে তার সংসারে নেমে এসেছে অন্ধকার। দেখা দিয়েছে অজানা শঙ্কা।

পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অসময়ে চলে যাওয়ার শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের লোকজন। আর ওহেদের মৃত্যুর খবরে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন পাওনাদাররা।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের লক্ষীপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আব্দুস ছামাদের ছেলে ওহেদ আলী চাষাবাদের জন্য নিজের জমিজমা না থাকায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কোন রকমে সংসার চালিয়ে আসছিল। পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করায় কিছুতেই স্বচ্ছলতা ফিরছিল না সংসারে। তাই সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন নিয়ে গত তিন মাস আগে চড়া সুদে সাড়ে ৮ লাখ টাকা ঋণ করে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাড়ি জমায় ওহেদ আলী।

তিন মাস যাবৎ সৌদিতে আলফাদ বলদিয়া ক্লিনিং কোম্পানিতে ক্লিনারের কাজ করলেও কোন টাকা পয়সাই বাড়িতে পাঠাতে পারেনি ওহেদ। এরই মধ্যে শুক্রবার ওহেদের সাথে একই কোম্পানিতে কাজ করতে যাওয়া টাঙ্গাইলের শেখ ফরিদের ফোনের মাধ্যমে ওহেদের পরিবার জানতে পারে বৃহস্পতিবার সৌদির রিয়াদে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ওহেদ। আর ওহেদ আলীর মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে তার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, চলছে কান্নার মাতম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন ওহেদের স্ত্রী অবিরন, মা ওহেলাসহ পরিবারের লোকজন। আর ওহেদ আলীর তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে রোজিনা বাবার শোকে বাকরূদ্ধ হয়ে গেছে।  

এদিকে ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য চড়া সুদে ঋণ করে ওহেদকে সৌদি পাঠালেও তার মৃত্যুতে শোকের সাথে বিরাজ করছে অজানা শঙ্কা। মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে পাওনাদাররা চাপ দিচ্ছেন ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য।

ওহেদের স্ত্রী অবিরন বেগম জানান, তিন মাস আগে সুদের উপর টাকা নিয়ে সৌদি গেলেও কোন টাকা পয়সা পাঠায়নি। এখন স্বামীর মৃত্যুতে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কিভাবে অভাবের সংসার চলবে বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্তত স্বামীর মরদেহটা যেন দ্রুত ফিরে পান এটাই এখন প্রত্যাশা।

মা ওহেলা বিবি জানান, সংসারে দুই পয়সা উপার্জনের জন্য ঋণ করে ওহেদ আলীকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। এখন ওহেদের মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই পাওনাদাররা টাকা ফিরে পেতে চাপ দিচ্ছেন।  

ওহেদ আলীর পরিবার ও এলাকাবাসীর প্রত্যাশা নিহত ওহেদের মরদেহ দ্রুত তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনাসহ ঋণ পরিশোধের জন্য তার অস্বচ্ছল পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করবে সরকার।

এ ব্যাপারে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ওহেদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও ওহেদ ঋণ করে বিদেশে যাওয়ায় পাওনাদারের মাধ্যমে যাতে তার পরিবারের লোকজন হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুভ্র মেহেদী/এসএস/এমএস