বাঁধাজালে আটকা উপকূলের প্রকৃতি
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বিভিন্ন নদ-নদী ও সাগর মোহনায় বাঁধাজাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করায় হুমকির মুখে পড়েছে উপকূলের প্রকৃতি ও পরিবেশ। এসব ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহারের ফলে মাছের ক্ষুদ্রাকার পোনা থেকে শুরু করে কিট-পতঙ্গ পর্যন্ত মারা পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অবৈধ এসব জালের ব্যবহার বন্ধ করতে না পারলে হুমকির মুখে পড়বে মাছ উৎপাদনসহ প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমন্তাজ ইউনিয়নের আশপাশের নদীগুলোতে অবৈধ বাঁধাজাল দিয়ে চলছে মাছ শিকার। আর এসব জালে সকল প্রকার মাছের পোনা, কাঁকড়া, কচ্ছপ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী ও কিটপতঙ্গ ধরা পড়ছে। এরফলে হুমকির মুখে রয়েছে জল ও স্থলের বাস্তুসংস্থান চক্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহাযোগী অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন নদ-নদী ও সাগর মোহনায় বাঁধাজাল দিয়ে মাছ শিকার করছে জেলেরা। আর এসব জালে মাছের পোনা থেকে শুরু করে ডিম, রেণু সবকিছুই মারা পড়ছে। এখনই এর বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
এদিকে অবৈধ এই জালের ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মাঠে কাজ করলেও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ফলে কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ তাদের অভিযান ও কার্যক্রম। আর জেলেরা বলছেন সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই চলে এই অবৈধ কাজ।
চরমন্তাজ ইউনিয়নের দারভাঙ্গা গ্রামের জেলে মতিয়র মৃধা বলেন, নদীতে অন্য জাল পাতলে কম মাছ ধরা পড়ে। তাই বাঁধাজাল পাতি।
একই গ্রামের জেলে মোশারফ ফকির বলেন, ‘বাঁধাজালের জন্য আমার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। নদীতে জাল পাতার লইগা প্রশাসনেরে টাকা দেওয়া লাগে। টাকা না দেলে নদী দিয়া ভোলার কোস্ট গার্ডরা আমাগো জাল লইয়া যায়। এইবার টাকা দেই নাই দেইখা আমাগো জাল লইয়া যাইতে আছে।’
কলাপাড়ার ধানখালী গ্রামের জেলে জালাল শরীফ জানান, বাঁধাজালের শুধু নদীতে না এই জাল দিয়ে সাগরেও মাছ শিকার করছে স্থানীয় জেলেরা। শুটকি পল্লীতে যে মাছ আসে সেটি বাঁধাজালের মাছ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মৎস্য বিভাগকে ম্যানেজ করতে স্থানীয় ভাবে গড়ে উঠেছে একাধিক দালাল চক্র। তারা অসাধু জেলেদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা তুলে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
তবে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল হাছানাত বলেন, মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপকূলের জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি করছেন জেলাবাসী।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এফএ/আইআই