মহেশখালীতে দুই বিমান বিধ্বস্ত, ৪ পাইলট জীবিত উদ্ধার
কক্সবাজারের মহেশখালীতে উড়ন্ত অবস্থায় সংঘর্ষে বিমানবাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সংঘর্ষে বিমান দুটির বিধ্বস্তাংশ মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা পালপাড়া ও উপজেলার ছোট মহেশখালীর মাইজপাড়া এলাকায় পড়ে আগুনে ভস্মীভূত হয়। বিমানের ধসে পড়া অংশে আঘাত পেয়ে আঁখি (১৫) ও ফয়সাল (১২) নামের দু’শিশু আহত হয়েছে। তারা স্থানীয় আব্দুস সাত্তারের সন্তান।
দুর্ঘটনার এক ঘণ্টার মাথায় দুই বিমানে থাকা চার পাইলটকে অক্ষতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন- গ্রুপ ক্যাপ্টেন শরীফ, স্কোয়াড্রন লিডার মনির, উইং কমান্ডার আজিম ও উইং কমান্ডার রাজীব।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল কালাম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে উদ্ধার পাইলটদের বরাত দিয়ে জানান, সন্ধ্যাকালীন মহড়ায় উড়তে গিয়ে মহেশখালী এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান দুটি কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সংযোগ হারায়। রাডারে সংযোগ হারানোর বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তারা প্যারাসুটের সাহায্যে বিমান থেকে নেমে নিজেদের রক্ষা করেন।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত জানিয়েছেন, বিমানবাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ বিমান সান্ধ্যকালীন মহড়ায় উড়তে গিয়ে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্তাংশটি মহেশখালী উপজেলার দুটি স্থানে পড়েছে। বিমান দুটি চট্টগ্রাম ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন হয়েছিল বলে জানান তিনি।
আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক (বিমানবাহিনী ডেস্ক) মো. নূর ইসলাম তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেছেন, দুটি বিমানে মোট চারজন পাইলট ছিলেন। তাদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। পাইলটরা সবাই ভালো আছেন।
উদ্ধারকৃত একজন পাইলট
তিনি জানান, ওয়াইএকে-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান দু’টি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম থেকে উড্ডয়ন করে। পৌনে ৭টার দিকে বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগ থেকে বিমান দু’টি রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বলে জানান নূর ইসলাম।
ঘটনাস্থল থেকে মহেশখালীর ইউএনও মো. আবুল কালাম মুঠোফোনে জানান, সন্ধ্যার পরপর আকাশে দুটি বিমানের সংঘর্ষে বিকট শব্দ শোনা যায়। এর অল্পক্ষণ পরই মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা পালপাড়া এলাকায় একটি অংশ পড়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। অপর অংশ পড়েছে উপজেলার নিকটবর্তী ছোট মহেশখালীর মাইজপাড়া এলাকায়। সেখানে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলতে দেখে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে আগুনের তীব্রতায় কেউ কাছে যেতে পারেননি।
তিনি আরও জানান, বিমানের একটি অংশ নিচে পড়ার সময় জনৈক আব্দুস সাত্তারের বাড়ির উপর অংশ উড়িয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতে গিয়ে পড়ে। ওই সময় দুই শিশু আহত হয়। বিলে পড়েই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় মাহবুব রোকন ও আবুল বশর পারভেজ জানান, সন্ধ্যার আকাশে দুটি বিমান ওড়ার শব্দ শুনতে পায় ঘরমুখো মানুষ। হঠাৎ বিকট শব্দে আকাশে আগুন দেখে থমকে দাঁড়ান সবাই। মুহূর্তে বিমানের বিধ্বস্তাংশ মাটিতে পড়ে দাউ দাউ জ্বলতে থাকে। একটি অংশ পুটিবিলার পালপাড়া ও অপর অংশটি প্রায় দু’তিন কিলোমিটার দুরে ছোট মহেশখালীর মাইজপাড়া এলাকায় গিয়ে পড়ে। দুটি স্থানেই ভিড় জমায় স্থানীয় লোকজন। রাতের আঁধারে যে যার মতো আলো নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, খবর পেয়ে পুলিশের পৃথক ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুলসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর চারজন পাইলটকে অক্ষতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের রাতেই কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এএম/জেআইএম