হিমাগারে পচছে স্বপ্ন
ধান উৎপাদনের জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। পাশাপাশি সবজি উৎপাদনও হয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও কৃষকরা আলু চাষে ঝুঁকেছিলেন। বেশি দাম পাওয়ার আশায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা কোল্ডস্টোরেজে মজুদ করেছিলেন আলু। কিন্তু সে আশায় এখন গুড়েবালি। পুরনো আলু কোল্ডস্টোরেজে (হিমাগার) মজুদ। তার উপর আবার নতুন আলুর আগমন। বর্তমানে বাজারে অন্য সবজির দাম বেশি হলেও আলুর দাম নিতান্তই কম।
আলুর দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা। পুঁজি হারিয়ে লোকসানে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। বর্তমানে এক বস্তা আলু (৮৫ কেজি) দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কৃষকরা। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ও পুরনো আলু বাজারে থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নওগাঁ জেলায় ৪টি কোল্ডস্টোরেজ আছে। এতে আলুর ধারণক্ষমতা প্রায় ৫ লাখ বস্তা। প্রতি বছর হিমাগারে আলু সংরক্ষণ শুরু হয় মার্চ মাসে। আর বের হয় নভেম্বর মাসে। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও কোল্ডস্টোরেজ এখনও ফাঁকা হয়নি। পুরনো আলু কোল্ডস্টোরেজে মজুদ। তার উপর আবার নতুন আলুর আগমন। বাজারে নতুন আলু বিক্রি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আর কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু কিনছেন না। ফলে কোল্ডস্টোরেজ গুলোতে পাইকারি ব্যবসায়ী না যাওয়ায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাধ্য হয়ে কোল্ডস্টোর ফাঁকা করতে কম দামে আলু ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
জেলার মান্দা উপজেলার তেলিপাড়া মোড়ে তামান্না কোল্ডস্টোরেজে গিয়ে দেখা যায় বস্তা বস্তা আলু স্টোরের বাইরে স্তুপ করে রাখা আছে। স্টোর ফাঁকা করতেই এভাবে রাখা হয়েছে। অনেক বস্তার মধ্য থেকে আলুর গাছ বেরিয়ে এসেছে। অনেক বস্তা থেকে আলু পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে।
মান্দা উপজেলার চকগোপাল গ্রামের কৃষক খুশবর রহমান জানান, ছয় বিঘা জমিতে কার্ডিনাল জাতের আলুর আবাদ করেছিলেন। প্রতি বিঘায় প্রায় ৬৫ মণ ফলন হয়। তামান্না কোল্ডস্টোরেজে আলু রেখেছেন। আর বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছিল কোল্ডস্টোরেজ পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ৩৩ হাজার টাকার মতো। কোল্ডস্টোরেজ ১৬০ বস্তা আলু রাখছিলাম। আলুর দাম কমে যাওয়ায় এখন সম্পূর্ণ লোকসান। কোল্ডস্টোরেজে আলু নিতে গেলে বস্তাপ্রতি ১০০-২০০ টাকা জমা দিয়ে ওঠাতে হবে। ফলে আলু আর উঠাতেই যায়নি।
জেলার নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ী জালাল হোসেন বলেন, বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। পুরাতন আলুর দাম কমে গেছে। এছাড়া স্টোর ফাঁকা করতে হবে। দাম কম হওয়ায় ১৬ বস্তা (৮৫ কেজি) ডায়মন্ড প্রতি বস্তা ২০০ টাকায় কিনেছি। এলাকায় গিয়ে বস্তাপ্রতি ৫০-১০০ টাকা লাভে বিক্রি করবেন। যারা আলু কিনে রেখেছিলেন তাদের এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার তামান্না কোল্ডস্টোরেজ ম্যানেজার সাইদ হাসান ভুট্টু বলেন, কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা এক লাখ ৫০ হাজার বস্তা। প্রতি বছর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কোল্ড স্টোরেজ ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার বস্তা আলু আছে। দাম না পেয়ে এখন এ অবস্থা। কৃষক এবং ব্যবসায়ী উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যবসায়ী ও কৃষকের বুঝিয়ে সুঝিয়ে কোল্ডস্টোরেজ ফাঁকা করা হবে।
আব্বাস আলী/এফএ/আইআই