দফায় দফায় বঞ্চিত সবজি চাষি
ঝিনাইদহে চাষিদের উৎপাদিত সবজি তিন দফায় হাত বদল হয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুনের বেশি দামে। ফলে সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা, কমে আসছে লাভের পরিমাণ। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব আর ফড়িয়াদের দৌরাত্মকেই এসব সমস্যার মূল কারণ বলছেন কৃষি কর্মকর্তরা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের চাষি আরিফ প্রধান জানান, ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। প্রতি কেজি সবজি খেত থেকে ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করছেন ১৫ টাকা কেজিতে। সেই সবজি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুনের বেশি দামে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে একই অবস্থা। এ চিত্র জেলার অধিকাংশ সবজি চাষির। বিভিন্ন এলাকার মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে পরিপুষ্ট ফুলকপি, বাধাকপি, সিমসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজি। বাজারগুলোতেও উঠতে শুরু করেছে এসব সবজি। সবজি পচনশীল পণ্য আর জেলায় নেই সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার।
ফলে চাষিরা খেত থেকেই উৎপাদিত ফুলকপি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যাপারিদর কাছে বিক্রি করছেন ১৫ টাকা কেজি দরে আর সিম বিক্রি করছেন ৩০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য সবজিও বিক্রি করছেন এভাবে। ব্যাপারীরা সেগুলো আড়তদারের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেশিতে। এরমধ্যে আবার আড়তদারের কমিশন কাটা হয় কেজিতে ১ টাকা। সেই সবজি খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছে গড়ে ৫/৭ টাকা বেশিতে। এতে করে চাষিরা প্রতি কেজি সবজিতে ঠকছেন গড়ে ১৫ টাকা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত জেলায় শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। সাধারণ সবজি চাষে বিঘা প্রতি খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, আর ফলন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। চাষিরা তিন দফায় বঞ্চিত না হলে লাভের পরিমাণ দাঁড়াতো গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
সবজি চাষি রহমান বিশ্বাস, কালাম মিয়া ও হাফেজ মন্ডল জানান, ব্যাপারী, ফড়িয়া, খুচরা বিক্রেতাদের জন্য আমরা সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। ফলে লাভের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসছে। তাই এদের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। এদের কারণে আমাদের লাভ্যাংশ কমে দাঁড়াচ্ছে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তাদের দৌরাত্ম না থাকলে প্রতি বিঘায় লাভ হতো ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
ব্যাপারী মনসের আলী, আড়তদার ইসলাম, খুচরা বিক্রেতা বিষ্ণু শিকার করলেন বেশি দামে সবজি বিক্রির কথা। চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে কয়েক টাকা লাভে বিক্রি করেন বলে জানান তারা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মো. মনিরুজ্জামান জানান, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ও ফড়িয়াদের দৌরাত্মে চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। তাদের লাভের পরিমাণ কমে আসছে। তাই চাষিদের দিকে তাকিয়ে এদের নিয়ন্ত্রণে সকলকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।
আহমেদ নাসিম আনসারী/এফএ/এমএস