ভরা মৌসুমেও খুলনায় বাড়ছে চালের দাম
মজুদদারদের কারসাজির কারণে চলতি বছর চালের দাম ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কিন্তু বেঁচে থাকতে হলে খেতে হবে। এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছেন মজুদদাররা। সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে চালের দাম বৃদ্ধি করেছেন তারা। তবে বাজারে নতুন চাল আসা শুরু হলেও সেই বাড়তি দামের কোনো হেরফের হচ্ছে না। কমার পরিবর্তে খুলনায় বেড়েই চলেছে চালের দাম। এখন ব্যবসায়ীরা চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন।
স্থানীয় বাজারে এ সময় চালের দাম কমে যাওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে তার উল্টো। গত দু’সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি অন্তত বেড়েছে চার টাকা। আর পাইকারির সঙ্গে খুচরা দামের পার্থক্যও বেশ। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে এমনও মন্তব্য করেছেন ভোক্তারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বেড়েছে।
চলতি বছর জুড়েই চালের বাজার রয়েছে অস্থির। বছরের শুরু থেকেই ধাপে ধাপে দাম বাড়তে থাকে অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটির। ভালো মানের ৩৫ টাকা কেজি চালের দাম বেড়ে হয় প্রায় দ্বিগুণ। আর মোটা চালের দাম বেড়ে হয় কেজি প্রতি প্রায় ৫০ টাকা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের প্রত্যাহিক বাজেটেও কাটছাট করতে বাধ্য হয়।
এসময় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার গ্রামে রেশনিং পদ্ধতিতে ১০ টাকা ও শহরে ওএমএস পদ্ধতিতে খোলা বাজারে ট্রাকে করে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। এক কথায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকিটের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারসহ ভোক্তারা। আমন মৌসুমের নতুন চাল বাজারে আসা শুরু করলেও এর বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। বরং চালের দাম বেড়েই চলেছে।
খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি মিনিকেট ৬১ থেকে ৬২ টাকা, ২৮ বালাম ৫২ টাকা ও স্বর্ণ মোটা ৪৪ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রায় দুই সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি মিনিকেট মিনিকেট ৫৮ টাকা, ২৮ বালাম ৪৮ টাকা ও স্বর্ণা মোটা ৪১ থেকে ৪২ টাকা দামে বিক্রি হয়।
এদিকে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট ৫৭ থেকে সাড়ে ৫৭ টাকা, ২৮ বালাম ৫১ থেকে সাড়ে ৫১ টাকা ও স্বর্ণা মোটা ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নতুন চাল মোটা ৩৮ টাকা, আতপ ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড বালাম চালের সামান্য আমদানি রয়েছে। যার প্রতিকেজি ৩৯ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর বড় বাজারে চাল কিনতে আসা তাসলিম হোসেন, আসাদ রহমান, সেলিনা আনোয়ার বলেন, চালের দাম এখন কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু হয়েছে তার বিপরীত। প্রায় ১০/১২ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার টাকারও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরেক ভোক্তা হায়দার আলী সরদার বলেন, বেশ কয়েক দিন আগে চালের দাম একটু কম ছিল। ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা অথচ কমছে না।
নগরীর বড় বাজার এলাকার চাল ব্যবসায়ী মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজি প্রতি প্রায় চার টাকা বাড়তি। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারগুলোতে নতুন চাল আমদানি হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসেনি দাম।
হান্নান আলমগীর/এফএ/এমএস