যশোরে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত : জলাবদ্ধ শহরবাসী
টানা দুইদিন মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন গোটা যশোরবাসী। গত কয়েকদিনের আষাঢ়ের বৃষ্টিপাতের মধ্যে গত দু’দিন দিনভর ভারী বর্ষণ হয়েছে। আর এই বৃষ্টিতে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ। শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ড্রেন উপচে রাস্তাঘাট তলিয়ে পানি প্রবেশ করেছে অসংখ্য বাড়িতে।
যশোরস্থ বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর আষাঢ়ের শুরু থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে আষাঢ়ের শেষদিকে এসে এর পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা যশোরে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একদিনের বৃষ্টিপাতের হিসেবে যা গত কয়েক মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আর শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। এ হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আগের ৩৬ ঘণ্টায় ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে বুধবার যশোরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩৮ মিলিমিটার। এর আগে গত দশদিন ধরে অল্পবিস্তর বৃষ্টিপাত হলেও সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে গত ২৮ জুন। ওইদিন যশোরে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের পর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে অনেক এলাকা ভেসে গেছে। ভারী বর্ষণে শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচে পড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের। এ মাছ ছড়িয়ে পড়ায় ড্রেন ও সড়কের উপরেই সৌখিন মৎস্য শিকারীদের তৎপরতাও দেখা গেছে।
শহরের টিবি ক্লিনিক এলাকার সুব্রত বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, দু’দিনের বৃষ্টিপাতে তাদের এলাকার ড্রেন উপচে রাস্তা তলিয়ে গেছে। আর বাড়ি উঠানে পানি আটকে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অনেক বাড়ির ঘরের মধ্যেও পানি প্রবেশ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এজন্য পানি নামতে না পারায় গোটা বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
যশোরের করবালা এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, কারবালা এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। ড্রেন আটকে থাকায় পানি নামছে না। ফলে তারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
শহরবাসীর অভিযোগ, বর্ষার আগে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার না হওয়া এবং বিভিন্ন এলাকায় বর্ষাকালে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলায় গোটা শহরের পানি নিষ্কাশন স্থবির হয়ে পড়েছে। ড্রেনের পানি উপচে এখন সড়কের ওপরে ঢেউ খেলছে।
এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুম জাগো নিউজকে জানান, পৌর এলাকার ড্রেন সংস্কার ও নির্মাণের কাজ চলায় কোনো কোনো এলাকায় পানি নিষ্কাশনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে দ্রুতই পানি সরিয়ে ফেলার জন্য তারা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
মিলন রহমান/এমজেড/এমএস