৪৬ বছরেও তাকালো না কেউ
পাবনার অধিকাংশ বধ্যভূমি ৪৬ বছর ধরে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। মুক্তিযোদ্ধা এবং গ্রামবাসীদের আবেদন সত্ত্বেও এগুলো সংস্কার কিংবা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক বধ্যভূমি রয়েছে। এরমধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল নাজিরপুর বধ্যভূমিতে।
জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে পাবনা সদর উপজেলার নাজিরপুর গ্রাম। গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি। গ্রামের শতভাগ মানুষ ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষের। এজন্য এ গ্রামের দিকেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার আল বদর ও পাক বাহিনীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল। আর তাই বিজয়ের ঠিক ১৫ দিন আগে ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাধীনতাবিরোধীদের সহায়তায় পাকিস্তানি আর্মি ভোর ৪টার দিকে গ্রামটি ঘিরে ফেলে। এরপর তারা অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাকাণ্ড চালায়। পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
এসময় তারা গ্রাম থেকে ৬৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বেছে বেছে ধরে নিয়ে আসে। তারপর পাবনা-পাকশী সড়কের পাশে মাটি গর্ত করে তাতে ওই ৬৬ মুক্তিযোদ্ধাকে জড় করে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। বেলা ১১টা পর্যন্ত পুরো গ্রামে তাণ্ডবের পর আর্মিরা চলে যায়। তারা চলে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা মরদেহগুলো নিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে কবর দেয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল বাতেন জানান, পাবনা সদর উপজেলায় এত বড় বদ্ধভূমি আর নেই। বালিয়াহালট, টিকোরী, তিন গাছা বাবুর বাগান, মাধপুর বটতলা, টেবুনিয়া সীড গোডাউনসহ অর্ধশত বধ্যভূমি রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা হত্যার শিকার হয় নাজিরপুরে। এখানে রাজাকার আল বদর আল শামসসহ স্থানীয় নকশাল বাহিনী ছিল স্বাধীনতার বিপক্ষে। কাজেই তারা আর্মির সঙ্গে মিলিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করে।
হেমায়েতপুর ইউনিয়নের কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান জানান, এই বদ্ধভূমিতে যাদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে আহম্মদ আলী, তার ছেলে মুক্তার আলী, আকাই, কলিমুদ্দিন, আব্বাস আলী, রানটা, মিজান, মুসা, আজাহার, খোরশেদ, সোবহান, আন্তাজ, তার ভাই ইন্তাজ, ময়দান আলী, হিরাজ উদ্দিন, সোহরাব প্রমুখ রয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা এবং গ্রামবাসীরা জানান, এতবড় হত্যাযজ্ঞ যেখানে হয় সেই বধ্যভূমিটি ৪৬ বছর ধরে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। শত চিঠি এবং আবেদন পাঠিয়েও এই বধ্যভূমি সংস্কার বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়নি।
একে জামান/এফএ/এমএস