রসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর বিজয় নির্ভর করছে অবাঙালির ভোটে
রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের আরমাত্র কয়েক দিন বাকি। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ভোটের হিসাব-নিকেশ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, বাজার, হোটেল রেঁস্তোরা, পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানসহ ঘরোয়া আড্ডাতেও এখন চলছে হিসাব কষাকষি।
অনেকের মতে, এবারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হলেও মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর ইমেজও প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে নতুন ভোটার, অবাঙালিদের ভোট, বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের ভোটসহ সাধারণ ভোটাররা অনেকটাই ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।
আর এসব ভোট নিজেদের পাল্লায় নিতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধান ৩ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রংপুর নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের এবার মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। ২০১২ সালে এখানে ভোটার ছিলেন তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন।
বিভিন্ন সূত্রমতে, এখানে সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন ৫০-৬০ হাজার। অবাঙালি (বিহারি) ভোটার প্রায় ৩০ হাজার, বর্ধিত এলাকার ভোটার রয়েছে প্রায় দেড় লাখ sএবং নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার।
২০১২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অবাঙালিরা (বিহারী) সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুর পক্ষে কাজ করেছিলেন। এছাড়াও বর্ধিত এলাকার অনেক ভোট পেয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে এখানে সাধারণত বিবেচনা করা হয় সংখ্যালঘু এবং কিছু অবাঙালি ভোটকে। এসব ভোট নৌকার ঝুলিতে নেয়া গেলে বিজয় হাতের মুঠোয়। গতবারের মতো এবারও বিহারীদের ভোট নিজের পক্ষে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন ঝন্টু।
জাতীয় পার্টি মনে করে রংপুর লাঙ্গলের ঘাঁটি। ১৯৯০ সাল থেকে রংপুরে লাঙ্গলের একচেটিয়া দাপট রয়েছে। এসব এলাকার মানুষের মধ্যে লাঙ্গলের জন্য ভালোবাসা ও আবেগ আছে। এছাড়া অবাঙালিসহ উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকার ভোটারদের পক্ষে নিতে পারলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত।
বিএনপি মনে করছে, তাদের নিজস্ব ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোট ছাড়াও জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী ও সমমনা দলের প্রায় ৪০ হাজার ভোট রয়েছে। এই ভোট তাদের রিজার্ভ ভোট। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি কখনই এই ভোটে ভাগ বসাতে পারবে না। এই ভোটের সঙ্গে বঞ্চিত এলাকার ভোট, অবাঙালিদের ভোট এবং নতুন ভোটারদের যত বেশি কাছে টানতে পারবে ততই সুবিধা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগামীর মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থীরই জয় নিশ্চিত।
এদিকে, বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের প্রায় দেড় লাখের মতো ভোটার এবারে নতুন করে হিসাব কষছেন। বিগত ৫ বছরে পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব কষে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট প্রদান করার কথা জানাচ্ছেন তারা। এখানে প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তি ইমেজটাই অধিকাংশ ভোটারদের কাছে গুরত্ব পাচ্ছে বলে একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
এছাড়া নতুন ৩৬ হাজার এবং অবাঙালিদের ভোটের হিসাবটাও প্রতীক নির্ভর হয়ে উঠবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফখরুল আনাম বেঞ্জু মনে করেন, দলীয় প্রতীকে ভোট অনুষ্ঠিত হলেও ৪০ শতাংশ ভোটার প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজকে বিবেচনা করবেন। এক্ষেত্রে বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের ভোট ছাড়াও নতুন ও অবাঙালি ভোটারদের রায় পাল্টে দিতে পারে ভোট ব্যাংকের হিসাব।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে রংপুরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা এর আগে হয়নি।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবেন বলে আশা করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ। গত পাঁচ বছর আমি মাঠে কাজ করেছি। ১৮টি নতুন এলাকার উন্নয়ন বঞ্চিত মানুষের সুখে-দুঃখে ছিলাম। এছাড়া অবাঙালি ভোটও আমার পক্ষে যাবে। সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ইনশাল্লাহ লাঙ্গল মার্কা বিপুল ভোটে জয়ী হবে।
বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা বলেন, সিটির প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটের আগের দিন নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। এরপরেও ২১ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলাম। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছি। নেতাকর্মীরা সঙ্গে রয়েছেন। তাদের এবং জামায়াত ও শরিক দলের নেতাকর্মীরাও ধানের শীষে তাদের ভোট দেবেন।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে ধানের শীষ এবারে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। আগামী ২১ ডিসেম্বর ১৯৩টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১২২টি বুথে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ।
জিতু কবীর/এমএএস/এমএস