রাজাকাররা বাবা-মা’র সামনে ভাইকে হত্যা করেছে
‘ওরা (রাজাকার) বাবা-মার সামনে ছোট ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। বাবা-মা রাজাকারদের পায়ে ধরেছে। তারপরও রক্ষা করতে পারেননি ভাইকে।’ ১৯৭১ সালে ৭ নভেম্বরের ঘটনার স্মৃতিরচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে এভাবেই বলেন ১০৮ বছর বয়সের বৃদ্ধা সাবেক শিক্ষক ইয়াসিন আলী মন্ডল।
নওগাঁ জেলার বদলাগছী উপজেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের বাসিন্দা ইয়াসিন আলী মন্ডল। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মূল গেট সংলগ্ন তার বাড়ি। তৎকালীন জয়পুরহাট জেলার বিল্লা মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন তিনি।
ইয়াসিন আলী মন্ডল বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা নিয়মিত আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করত। আমি তাদের গোপনে সহযোগিতা করতাম। কিন্তু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। এলাকা থেকে টাকা পয়সা তুলে তাদেরকে সহযোগিতা করতাম। কারণ, তখন সবাই ছিল অভাবি। কতগুলো লোক অভাবের কারণে রাজাকারে যোগ দিয়েছিল।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সহযোগিতা করতাম তা স্থানীয় রাজাকারদের কে যেন বলে দিয়েছিল। এরপর স্থানীয় মালঞ্চা এলাকার রাজাকার রেজাউল করিম মন্টু, নজরুল ইসলাম, ইসহাক, ছয়ের আলীসহ কয়েকজন আমাকে মারার জন্য আমাদের গ্রামে আসে। গ্রামের ছোট ছেলেরা এসে বিষয়টি আমাকে জানায়, বড় আব্বু ওরা তোমাকে মারার জন্য আসছে। ভয়ে আমি সেদিন পালিয়ে গিয়ে পাশের গ্রামের আদিবাসীদের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলাম। তারা (রাজাকার) এসে পাহাড়পুর গ্রামের কয়েকজনের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ভয়ে অনেকে ছুটাছুটি করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ওইদিন আমার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন বাড়িতে ছিল। ভয়ে সে আদরের খাসি (ছাগল) কাছে নিয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। পরে রাজাকাররা বাড়ি তল্লাশি করে তাকে পায়। রাজাকাররা আমাকে ভেবে ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিনকে অনেক নির্যাতন করে। ভাই বলেছিল, সে ইয়াসিন না। কিন্তু রাজাকাররা তা বিশ্বাস করেনি। এমনকি বাবা-মার কথাও তারা বিশ্বাস করেনি। ওরা বাবা-মার সামনে আমাকে ভেবে ছোট ভাইয়ের বুকে গুলি করে হত্যা করে।
শুনেছি যুদ্ধাপরাধের মামলায় ওই চার রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চারজনের মধ্যে ইসহাক মারা গেছে। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। যারা নিরহ মানুষকেও হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে ফাঁসির দাবি করে রাজাকারদের গুলিতে ভাই হারা শিক্ষক ইয়াসিন আলী মন্ডল।
আব্বাস আলী/আরএস/এমএস