ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ইতিহাসে কি থাকবে না ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী!

প্রকাশিত: ০৮:০৬ এএম, ০৭ জুলাই ২০১৫

প্রয়োজনীয় সংস্কার আর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলার বার ভূঁইয়া মসনদ-ই আলা ঈশাখাঁর দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ি দুর্গ। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থেকে এরই মধ্যে বিনষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৫শ বছরের প্রাচীন এ দুর্গের মূল্যবান স্থাপনা ও ঐতিহাসিক নিদর্শন।

জঙ্গলবাড়িতে বসবাসকারী ঈশাখাঁর বংশধরদের দাবি ঈশাখাঁর গৌরবোজ্জল স্মৃতিকে ধরে রাখতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় জঙ্গলবাড়িকে গড়ে তোলা হোক একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের নরসুন্দা নদীর তীরে জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অবস্থান। এক সময় দুর্গম জঙ্গলাকীর্ণ ছিল বলেই হয়তো এর নাম হয়েছে জঙ্গলবাড়ি। বার ভূঁইয়াদের শ্রেষ্ঠ বীর ঈশাখাঁর রাজধানী হিসেবে জঙ্গলবাড়ির নাম মিশে আছে ইতিহাসে। এখানে রয়েছে প্রায় ভগ্ন দুর্গপ্রাচীর, ধ্বংসপ্রাপ্ত ঈশাখাঁর দরবার হল, প্রাচীন মসজিদ, পরীবিবির মাজার, সামনে ধ্বংসপ্রাপ্ত শান বাঁধানো ঘাটের বিশাল পুকুর ও প্রায় মাটি চাপা পড়া একটি ভবনের ভিত্তি ভূমি।

জানা গেছে, ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময় মোগলদের কাছে পরাজিত হয়ে মসনদ-ই আলা ঈশাখাঁর জঙ্গলবাড়িতে কোচ রাজা লক্ষণ হাজোর দুর্গে হামলা করে এটি দখল করে নেন। জঙ্গলবাড়িতে স্থাপন করেন তার দ্বিতীয় রাজধানী। দুর্গটি সংস্কার করে তিনি এর তিন দিকে পরিখা খনন করে নরসুন্দা নদীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে জঙ্গলবাড়িকে একটি গোলাকার দ্বীপের মতো করে গড়ে তোলেন।

১৫৮১ থেকে ১৫৮৫ সাল পর্যন্ত ঈশাখাঁ জঙ্গলবাড়িতে অবস্থান করে শাসন করেন তার ২২টি পরগনা। জঙ্গলবাড়িতে অবস্থান করেই তিনি সোনারগাঁও দখল করে সেখানে স্থাপন করেন নতুন রাজধানী। আর তখন থেকেই জৌলুস হারাতে থাকে জঙ্গলবাড়ি।
কালের বিবর্তনে আজ হারাতে বসেছে জঙ্গলবাড়ির স্মৃতি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসছেন এখানে। কিন্তু হতাশ হচ্ছেন তারা জঙ্গলবাড়ির হতশ্রী চেহারা দেখে।

কুমিল্লা থেকে আশা দর্শনার্থী মো. শফিউল্লাহ অনেক আশা নিয়ে দেখতে এসেছেন জঙ্গলবাড়িতে অবস্থিত ঈশাখাঁর বাড়ি। কিন্তু এখানে এসে আশাহত হন তিনি। জানালেন, দেশের এমন একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা এভাবে অযত্নে পড়ে আছে, ভাবতেই অবাক লাগে।

আরেক দর্শনার্থী একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন সুমন জাগো নিউজকে বলেন, এটি দেশের মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। অথচ ভবনের দেয়াল থেকে ইট খসে পড়ছে। চারদিক জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে আছে। তাদের মতো অনেক দর্শনার্থীকেই জঙ্গলবাড়িতে এসে মন খারাপ করা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যেতে হয়।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এটিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে একটি সাইনবোর্ড সেটে দিয়েছে। করিমগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জঙ্গলবাড়ি দুর্গের একটি দরবার হল সংস্কার করে স্থাপন করেছে ‘ঈশাখাঁ স্মৃতি জাদুঘর`। কিন্তু এখানে কয়েকটি ফটোগ্রাফ, ঈশাখাঁর বংশ তালিকা ছাড়া ঈশাখাঁর স্মৃতি বিজড়িত তেমন কিছুই নেই। তবে প্রশাসন এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু করেছে চিঠি চালাচালি।
 
জঙ্গলবাড়িতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন ঈশাখাঁর আত্মীয়-স্বজন। তারাও চাচ্ছেন জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ও এর ৪০ একর ভূমি সরকারি মালিকানায় নিয়ে এটাকে গড়ে তোলা হোক একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে।

ঈশাখাঁর ১৫তম বংশধর দেওয়ান জামাল দাদ খান জাগো নিউজকে জানান, সরকারি নজরদারি না থাকায় বহু মূল্যবান স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এক শ্রেণির ভূমিদস্যুরা দখল করে নিচ্ছেন দুর্গের জমি। এরই মধ্যে ৪০ একর ভূমির অর্ধেকই অবৈধ দখলে চলে গেছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জঙ্গলবাড়িকে ঘিরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।

করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম শাহীন জাগো নিউজকে জানান, জঙ্গলবাড়িতে একটি পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এলাকাবাসী আশা করছেন বীর ঈশাখাঁর স্মৃতি বিজড়িত জঙ্গলবাড়ির প্রায় বিধ্বস্ত দুর্গটি সংস্কার করে সরকারি ববস্থাপনায় এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

এমজেড/পিআর