ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রায় প্রত্যাখ্যান ফেলানীর বাবা-মার

প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ০৩ জুলাই ২০১৫

ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ এর বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যা মামলার পুনর্বিচারের রায়ে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত ৩ মাস ৫ দিন মুলতবি থাকার পর গত ৩০ জুন বিচার কাজ শুরু হয়। আদালত ৩ কার্য দিবস চলার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

বিএসএফ এর বিশেষ আদালতের সোনারী ছাউনীতে বিএসএফ এর আধিকারীক সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বিচারিক প্যানেল বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এ বিচার কাজ পরিচালিত হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আদালত তাদের রায় ঘোষণা করেন। এতে আসামি অমিয় ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত না করে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
এদিকে অপ্রত্যাশিত এই রায়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা। তারা মেয়ে ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন।

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম নুরু জাগো নিউজকে জানান, দুই দফা সাক্ষ্য দেয়ার পরও তার মেয়ে হত্যার ন্যায্য বিচার পাননি তিনি। তিনি এ রায় প্রত্যাখ্যান করেন। তার মতে অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল। তা না করে ভারত সরকার বিচারের নামে তামাশা করেছে আমাদের সঙ্গে। আমি ন্যায় বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাবো।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, আমার মেয়েকে যে বিএসএফ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করলো, ভারত সরকার তার বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমার মেয়েতো মারা গেছে কিন্তু, তার আত্মার শান্তি পাওয়া হলো না। আমরা গরিব বলে আমাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার নেই।

নিহত ফেলানীর বাড়ির প্রতিবেশিরা রাতারাতি এই রায়ের কথা শুনে হতবাক হয়েছেন। প্রতিবেশি নজরুল, মজিবর, কুলসুম জানান, এমন রায়ে আমরা সবাই অবাক হয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম এর আগে যেহেতু সঠিক বিচার হয় নাই এবার হবে। কিন্তু তা আর হলো না। বাহে হামরা এলা বুঝবার পাইলং গরিব মাইনষের বিচার আল্লাহ ছাড়া কাইও করবান নয়। এই বিচার সঠিকভাবে না হওয়ায় কাটাতারের এলাকায় আরো বেশি করে বিএসএফ গুলি করে মানুষ মারবে কিন্তু বিচার হবে না।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর ফলে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি করবে। এ রায় মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

তিনি আরো জানান, ভারতীয় সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধ আপিল করতে পারেন। পাশাপাশি ফেলানীর বাবা এই রায়ের বিরুদ্ধে ভারতের উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।

কুড়িগ্রাম ৪৫ ব্যাটালিয়ন বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল জাকির হোসেন এ ব্যাপারে জাগো নিউজকে জানান, আমরা গণমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি আসামী অমীয় ঘোষকে খালাস দিয়েছে আদালত। এরআগে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের বিশেষ আদালতে এ হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। অভিযুক্ত বিএসএফ হাবিলদার অমীয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সিপি ক্রিবেদীর নেতৃতাধিন প্যানেল অমীয় ঘোষকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। আজো একই বিচারক প্যানেল এই রায় প্রদান করেছেন। তিনি আরো বলেন, আদালতের রায় এখনো অফিসিয়ালি আমরা পাইনি। পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ফেরার সময় ভারতের চৌধুরীহাট বিএসএফ ক্যাম্পের অমিয় ঘোষ ১৫ বছরের কিশোরি ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনার ২ বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার সোনারী এলাকায় ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ওই বিচারে বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেয়া হয়। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছে আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। বাবা নুরুল ইসলাম গত বছরের ১৭ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষ্য দেন ভারতের ওই বিশেষ আদালতে। কয়েকদিন আদালত চলার পর গত ২০ নভেম্বর আদালত মূলতবি হয়ে যায়। ২৫ মার্চ পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ২৬ মার্চ আসামি অমিয় ঘোষ এবং আইজীবীর অসুস্থতার কারণে আদালত আবারো ২৯ জুন পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়। পরে ৩০ জুন আদালত শুরু হয়ে ৩ দিন ধরে চলে বিচারিক কার্যক্রম। এরপরই বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

নাজমুল হোসেন/এমজেড/আরআই