তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভোগান্তি চরমে
তিস্তা নদীর উজানের ঢল কমতে শুরু করলেও তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় এ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা অববাহিকার ৫০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় আরো ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিটি ঘরবাড়ি কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ বন্যা কবলিত মানুষজন তাদের গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে তিস্তার ডান তীর ও বাম তীর বাঁধে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তিস্তার কমতে শুরু করলে বন্যার ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। তিস্তার প্রবল স্রোতের কারণে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সীমানার মাটির বাঁধটি ১ হাজার মিটার, পশ্চিম বাইশপুকুর গ্রামের বালুর বাঁধটির ১০০ মিটার, পশ্চিম বাইশপুকুর গ্রামের ২টি মাটির বাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের স্বপন বাঁধের ২০০ মিটার মাটির বাঁধের প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তিস্তার বিভিন্ন গ্রামের ৬টি রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে। জেলা প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে ১ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। তিস্তার দুর্গম এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার, খাবার পানি ও পয়নিষ্কাসনে চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনের দেখা যায়, টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বাঁধ সংলগ্ন মাটির বাঁধটির ১ হাজার মিটার বুধবার রাত ১০টায় ভেঙে যায়। বাঁধটি ভেঙে গেলে পূর্ব খগিবাড়ী, চর খড়িবাড়ী, জিঞ্জিরপাড়ার সহস্রাধিক পরিবারের বসতভিটা কোমর থেকে হাটু পানিতে তলিয়ে যায়। একই ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামের স্বপন বাঁধটি সিডিএমপি প্রকল্পের আওতায় ২৮ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ব্যায়ে ১৯০০ মিটার মাটির বাঁধ তৈরি করা হয়। বাঁধটি নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এলজিএসপি প্রকল্পের ব্লক তৈরি করে রক্ষার চেষ্টা করেন ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন।
তিস্তার প্রবল স্রোতের কারণে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ীর ৩টি মাটির রাস্তা ও খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের ৩টি মাটির রাস্তা ভেঙ্গে পড়েছে। অপর দিকে জলঢাকা উপজেলা গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি ,শৌলমারী এলাকায় তিস্তা নদীর ডান তীর হুমকির মুখে পড়েছে।
তিস্তার বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও গতকাল রাতের প্রবল বন্যার কারণে তিস্তার চরের ২৫টি গ্রামের বসবাসকারীদের রান্না ঘরের চুলা, নলকূপ ও কাঁচা পায়খানা পানির তোড়ে ভেষে যায়। বুধবার রাতে পরিবারগুলো বাঁধে আশ্রয় নিলেও সকালে অনেকে বাড়ি ফিরে কী করবে ভাবত পারছে না।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, জরুরি ভিত্তিতে ১০ মেট্রিকটন খয়রাতি চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা রবাদ্দ দেয়া হয়েছে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জাগো নিউজে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৩৫ সেন্টিমিটার ও বিকাল ৫টায় বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢল কমে আসায় তিস্তা অববাহিকায় লাল সঙ্কেত প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/আরআই