শিকলে বাঁধা সুরবালার জীবন
হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ৬৭ বছর বয়সী মায়ের পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছে তার সন্তানরা। গত তিন বছর থেকে পায়ে শিকলের বেড়ি নিয়ে যন্ত্রণার জীবন-যাপন করছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আদিবাসী বৃদ্ধা সুরবালা রানী পাহান (৬৭)।
সুরবালা উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের বড় মহেষপুর (জঙ্গিপাড়া) গ্রামের মৃত কালু পাহানের স্ত্রী। তিনি এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে সন্তানের জননী।
স্থানীয়রা জানান, নিখোঁজের আগে সুরবালা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলত। হঠাৎ করেই গত তিন বছর আগে বিকেলে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন তিনি। নিখোঁজের ৫-৬ দিন পর সুরবালাকে তার সন্তানরা উদ্ধার করে নিয়ে এসে পায়ে শিকল দিয়ে তালা লাগিয়ে রাখে। তারপর থেকে সুরবালা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
দিন আনা দিন খাওয়া আদিবাসী এ অসহায় পরিবারটির সামর্থ না থাকায় ভালো ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেনি সুরিবালার। তাকে তার সন্তানরা স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে ব্রেইনের সমস্যা হয়েছে বলে জানায়। এরপর থেকে তাদের মা যেন হারিয়ে না যায় এ ভয়ে পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছে।
সুরবালার বড় মেয়ে জিরো পাহান বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। তাই মায়ের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে মায়ের নামে বয়স্ক ভাতার একটি কার্ড করে দেয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি। বয়স্ক ভাতার একটা কার্ড পেলে মায়ের জন্য সুবিধা হতো এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারতাম।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিবনাথ মিশ্র বলেন, শিকলে বাধা বৃদ্ধার বিষয়টি অবগত আছেন। মাথার সমস্যার কারণে তার ছেলে-মেয়েরা শিকলে বন্ধি করে রেখেছে তাকে। তবে আগামীতে যে তালিকা করা হবে সেখানে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হবে।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) এসএম হাবিবুর রহমান বলেন, এটি একটি মানবিক বিষয়। আগে কেউ কখনও একথা জানায়নি। সার্বিক বিষয় খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য ঘটনাস্থলে শিগগিরই লোক পাঠানো হবে। আর সম্ভব হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।
আব্বাস আলী/এমএএস/আইআই