প্রশ্ন ফাঁস চক্রের ৬ সদস্যকে আটকের পর কারাদণ্ড
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত চক্রের ৬ সদস্যকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসসহ আটকের পর কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে দুই ভর্তি পরীক্ষার্থী ও এক শিক্ষকও রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্র ও এক ছাত্রাবাস থেকে এদের আটক করা হয়। বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের সাজা প্রদান করা হয়। দুই ছাত্রকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড এবং শিক্ষকসহ আরও তিন সহযোগীকে ২ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- পরীক্ষার্থী যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকী বিল্লাহ’র ছেলে আতাউল্লাহ সোহান ও শার্শার ডিহি গ্রামের আনিসুজ্জামান খানের ছেলে মাশরাফি জামান খান, আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের ভূগোলের শিক্ষক মণিরামপুরের কুলটিয়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস, এমএম কলেজের গণিত বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র বেনাপোল এলাকার বজলুর রহমানের ছেলে সাজেদুর রহমান ও আহম্মদ উল্লাহ’র ছেলে মাহবুব এবং একই এলাকার শাহে আলমের ছেলে রায়হান।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রাব্বানী জানান, যবিপ্রবি’র ভর্তির পরীক্ষার যশোর এমএম কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী মাশরাফি জামান পরীক্ষা কক্ষে বসেই ডিভাইসে কথা বলার চেষ্টা করে। এ সময় তাকে তল্লাশি করে হাতে বাঁধা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এবং কানে হিয়ারিং ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। এরপর মাশরাফির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এমএম কলেজের সামনে খড়কি এলাকার আলোর পরশ ছাত্রাবাসে অভিযান চালায় পুলিশ। এই অভিযানে আটক করা হয় সাজেদুর, মাহবুব ও রায়হানকে। পরীক্ষায় উত্তর বলে দেয়ার জন্য পরীক্ষার্থী মাশরাফি ওই চক্রের সাথে এক লাখ টাকায় চুক্তি করেছিল বলে স্বীকার করেছে।
এর আগে ভর্তি পরীক্ষার আরেক কেন্দ্র ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের একটি কক্ষে দায়িত্বরত পরিদর্শক ওই কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক আব্দুল কুদ্দুসকে আটক করা হয়। তিনি একটি মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় যবিপ্রবি’র কেন্দ্র পরীদর্শক দল তাকে আটক করে।
একই সময়ে যশোর শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী আতাউল্লাহ সোহানের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে তল্লাশি করা হয়। এ সময় তার কান থেকে হেয়ারিং ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। পরে তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
যশোরের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান জানান, পাবলিক পরীক্ষায় নকল সহায়তার অপরাধে ১৯৮০ এর ৯ ধারা মোতাবেক শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস ও তিন সহযোগী সাজেদুর, মাহবুব ও রায়হানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। একইসঙ্গে দুই পরীক্ষার্থী আতউল্লাহ সোহান ও মাশরাফি জামানকে ১৮৬০ এর ১০৮ ধারা মোতাবেক পরীক্ষার সরকারি নিদের্শনা অমান্য করায় ১৫ দিন করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, জালিয়াত চক্র সক্রিয় থাকায় যবিপ্রবি’র ভর্তি পরীক্ষা সর্বোচ্চ সর্তকর্তার সাথে গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হয়। প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়েরও একাধিক ভিজিলেন্স টিম মাঠে ছিল। এদের সবার তৎপরতার কারণে এই জালিয়াত চক্র প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি। বরং ওই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক ও সাজা প্রদান সম্ভব হয়েছে।
মিলন রহমান/এএম/জেআইএম