সিলেটের এ বৃদ্ধাকে কেউ চিনতে পারছেন না!
জরাগ্রস্ত, জীর্ণকায় শরীর। রশি দিয়ে হাত-পা বাঁধা। বয়স অনুমান করা কঠিন। তবে ষাটের কম না। এমন এক বৃদ্ধাই এই অবস্থায় তিনদিন ধরে পড়ে আছেন সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে। প্রচণ্ড রোদ যাচ্ছে। অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। তার কোনো আশ্রয় নেই। কেউ তাকে এতটুকু ছায়া দিচ্ছেন না। জায়গা দিচ্ছেন না।
ঝুম বৃষ্টিতে যখন এ বৃদ্ধা বিপন্ন তখন এক পথচারি নারী তার ছাতাটি ওই বৃদ্ধার হাতের ভাঁজে গুজে দিয়েছেন। আশ্রয় বলতে এখন ওই এক ছাতাই। রোববার রাতে অবশ্য তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়েছেন পথচারিরা।
বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলেও কোনো তথ্য বের করা যায়নি। তিনি কে, কোথা থেকে কীভাবে এখানে এলেন? কে তাকে ফেলে গেল? কোনো প্রশ্নের জবাবই মিলছে না তার কাছে। শুধু থেকে থেকে একটি কথাই বলছেন, বারবার। ‘নারায়ণ, আমার নারায়ণ আইয়া আমারে নিব’। কে এই নারায়ণ, এমন প্রশ্নেরও উত্তর দিচ্ছেন না তিনি। তবে, তার কথায় মনে হয়, সম্ভবত ছেলে হবে! তবে কী নারায়ণ নামের তার ছেলেই, হাত-পা বেঁধে বৃদ্ধা মাকে শহীদ মিনারে ফেলে গেছেন!
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শনিবার রাতের কোনো একসময় এই বৃদ্ধাকে এখানে ফেলে যাওয়া হয়। এখন তিনি শহীদ মিনারের বিপরীত পাশে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ফুটপাতে রয়েছেন। আশ্রয় বলতে সেই ছাতা। অপেক্ষা নারায়ণের। যিনি তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবেন। দিনের আলো ফুরিয়ে রাত হচ্ছে কিন্তু এখনো নারায়ণের ছায়া পড়েনি। তবুও, বৃদ্ধা নিরাশ নন, তিনি আশায় আছেন, নারায়ণ আসবে। তাকে উদ্ধার করবেন! কোথায় সেই নারায়ন!
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শনিবার রাত দুইটার দিকে স্থানীয় মামুন হোসাইন নামের একজন পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। জবাবে ওই সময়ই সহকারী কমিশনার বলেছিলেন, ‘দেখছি’।
রোববার ইফতারের আগে কথা হয় কোতোয়ালি থানা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বৃদ্ধার ব্যাপারে তারা খোঁজ নিয়েছেন। ওই বৃদ্ধা ‘পাগল’। তাকে উদ্ধার করে আশ্রয় দিতে সমাজসেবা অফিসারের সঙ্গে কথা বলা হবে।
তিনি আরো জানান, সর্বশেষ ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছামির মাহমুদ/এমজেড/আরআইপি