তিনদিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিদেশিসহ আটক ৭২
মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন। খাদ্য, বাসস্থান, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সহযোগিতায় জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি কাজ করছেন সেনা সদস্যরাও।
তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে রোহিঙ্গাদের ত্রাণপ্রাপ্তি ও নিবন্ধন নিশ্চিত করে আসছেন। এটি অব্যাহত রাখতে সরকারি সিদ্ধান্ত মতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যাতীত ব্যক্তি উদ্যোগে ক্যাম্পে কিংবা বাইরে কোনো রোহিঙ্গাকে ত্রাণ না দিতে বার বার মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছে প্রশাসন। ক্যাম্পে কাজ করা এনজিও প্রতিনিধিদেরও এ ব্যাপারে অবহিত করা আছে।
যারা নির্দেশনা অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা থাকলেও ক্যাম্পে বা বাইরের কোনো স্থানে রাতের আঁধারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ করছে কয়েকটি চক্র। এভাবে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে সোমবার রাতে বিদেশিসহ ২৬ জন এবং ৩ নভেম্বর রাতে রোহিঙ্গাসহ ৪৬ জনকে আটক করেছে প্রশাসন।
উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন দেশি-বিদেশি বেশ কিছু লোক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে- এমন খবর পেয়ে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পে অভিযান চালানো হয়। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লম্বা শিয়া ও ক্যাম্পের ডি-৪ এলাকার বস্তি হিসেবে পরিচিত এলাকায় এ অভিযান চলে। অভিযানে পাঁচ বিদেশি নাগরিকসহ ২৬ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। বিদেশি পাঁচজনকে মুচলেকা নিয়ে পাসপোর্ট জমা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকি ২১ জনের মধ্যে চার রোহিঙ্গাসহ ১০ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। এদের মধ্যে ১১জন দেশের বিভিন্ন জেলার মৌলানা। এদের সবাইকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
সোমবারের অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ। তিনি বলেন, এত রাতে ক্যাম্পে ঘোরাঘুরি করা বিদেশি নাগরিকদের রাতের বেলায় রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান কিংবা ঘোরাঘুরির বিষয়ে পররাষ্ট্র কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বিষয়ে জানতে চাইলে তা দেখাতে পারেননি। তারা জানাননি জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসনকেও। অভিযানে পাঁচজন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। তাদের মাঝে একজন চীনের, বাকিরা ব্রিটিশ নাগরিক। মুচলকো নিয়ে এবং পাসপোর্ট জমা রেখে পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে খালেদ মাহমুদ তাদের নাম-পরিচয় জানাননি।
অভিযানে থাকা পুলিশের উখিয়া-টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশি-বিদেশি কোনো লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ। বিগত একমাস ধরে মাইকিং করে বিষয়টি জানানো হচ্ছে।
অপরদিকে গত ৩ নভেম্বর উখিয়ার রত্মপালং রুহুল্লার ডেবা মাদরাসায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে ৪৬ জনকে আটক করে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় বিতরণের জন্য আনা ২৪৮ প্যাকেট ত্রাণও জব্দ করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ৪৪ জন রোহিঙ্গা। পরে ত্রাণ নিতে আসা ৪০ জনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ৬ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
সেদিন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকার ৭৯নং সূত্রাপুর এলাকার মোহাম্মদ সেন্টুর ছেলে মো. আসিফ (২২), উখিয়ার পশ্চিম রত্নাপালং এলাকার ফরিদ আহমদের ছেলে ইকবাল হোসেন (৩২), কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে আমির হোসেন (৫২), মৃত মকবুল আহমদের ছেলে নুরুল ইসলাম (৬০), ইয়াকুব আলীর ছেলে ছৈয়দুল আমিন (৫১) ও আবুল খায়েরের ছেলে শামশুল আলম (৪৮)। এদের মাঝে আসিফকে তিন হাজার ও ইকবাল হোসেনকে সাত হাজার টাকা এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ক্যাম্পে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে জেলা প্রশাসন ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ দিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশি-বিদেশি সন্দেহভাজন লোকজন রাতের বেলা অবস্থান করছে এমন খবর পেলে অভিযান চালানো হয়।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কিছু চক্র বিশেষ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে- এমন অভিযোগ রয়েছে। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত এলাকায় নাফ নদের তীরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই চলাচলের সুবিধার জন্য অস্থায়ী সেতু স্থাপনের কাজও শুরু করেছিল। বিনা অনুমতিতে নির্মাণাধীন ওই সেতুর কাজ সোমবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানবিক কারণে এখন অনেক কিছুই সহ্য করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি অসহনীয় হলে কঠোর অবস্থানে যাবে প্রশাসন।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/আরআইপি