কুড়িগ্রামে নৌ-থানা জরাজীর্ণ অবস্থায় : নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
কুড়িগ্রাম জেলার ঢুষমারা নৌ থানার জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন চরাঞ্চলবাসী। ডাকাত আতঙ্কে দিন কাটছে নদীর তীরবর্তী মানুষদের। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ঢুষমারা থানা অবস্থিত হওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে এ অঞ্চলের বাসিন্দারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ফলে ঘটছে নিরাপত্তা প্রদানেও বিঘ্নতা। এমনকি ঢুষমারা থানাটিই খুব জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
দেশের ২য় বৃহত্তম নদীবেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, ধরলাসহ ১৬টি নদ-নদীর ১৪৭.২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদী পথ। এ নদী পথে গড়ে উঠেছে সাড়ে ৪ শতাধিকের মতো দ্বীপচর। এই চরগুলোতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এছাড়াও জেলার তিন দিক ঘিরে রেখেছে ২৭৮.২৮ কি. মি. ব্যাপী ভারতের সীমান্ত এলাকা।
জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ২২ লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষের জন্য থানা রয়েছে ১২টি এরমধ্যে নৌ থানা মাত্র একটি। নদীর তীরবর্তী বিশাল এ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলার চিলামারী উপজেলার অষ্টমীর চরে ১৯৭৩ সালে ঘোষণা করা হয় ঢুষমারা নৌ থানা। বার বার নদী ভাঙনের ফলে স্থায়ী ঠিকানা হয়ে ওঠেনি থানাটির। জায়গা-জমি আর ভবন না থাকায় দীর্ঘ দিন থেকে দক্ষিণ নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থানার কার্যক্রম চলে।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে ডাটিয়ার চরে তিন একর জমিতে গড়ে উঠে মাত্র ৪টি টিন শেড ঘরের ৬টি কক্ষ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ থানা। এ থানা প্রকাশ পায় ২০১০ সালে। নদী পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ থানায় রয়েছেন মাত্র ২১ জন নিরাপত্তা রক্ষী।
ডাটিয়ার চরের বাসিন্দা আইয়ুব আলী, রমজান, শমসের জাগো নিউজকে জানান, নদী পথে সারা বছরই কম-বেশি ডাকাতের উৎপাত থাকলেও বন্যার সময় তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। নিরাপত্তার জন্য একটি নৌ থানা থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই নাজুক অবস্থায় থাকে যে চলাচল করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ভরা বর্ষাতেও থানার জন্য একটি নৌসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদির অভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে নিরাপত্তা। ফলে নৌ থানা থেকেও আমাদের প্রতি বন্যায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়।
স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বর নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ঢুষমারা নৌ থানা নির্মাণের পর এ এলাকার অপরাধ অনেকটাই কমে আসলেও তা নদী ভাঙনের ফলে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে আসছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকবার স্থানান্তরিত হতে হয়েছে থানাটিকে। পরে ৭ বৎসর একটি স্কুল ঘরে এ থানার কার্যক্রম চলে। জমির বন্দোবস্ত হলেও অবকাঠামোসহ সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এখানকার পুলিশ সদস্যরা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসে ঢুষমারা নৌ থানার নিরাপত্তা রক্ষীদের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঢুষমারা নৌ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, মানুষের মৌলিক ৫টি অধিকার রয়েছে তা থেকে আমরা এই থানার নিরাপত্তা কর্মীরা পুরোপুরি বঞ্চিত হয়ে আছি। আধুনিক বিশ্বায়নেও আধুনিক সুবিধার বাইরে এই থানা। নেই থাকা-খাওয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার ফলে সঠিকভাবে নিরাপত্তা প্রদানে ব্যঘাত ঘটছে তাদের। পুলিশ সদস্যরা তাদের মানবেতর জীবন-যাপন থেকে মুক্তি পেতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ঢুষমারা নৌ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজনুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, জেলা থেকে প্রায় ৪৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত ঢুষমারা নৌ থানা। এরমধ্যে চিলমারী বন্দর থেকে নৌকাযোগে আসতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। নয়ারহাট, অষ্টমির চর, মোহনগঞ্জ এ তিনটি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হচ্ছে হাজারও সমস্যার মধ্য থেকে। এখানে রয়েছে ৪টি টিনশেড ঘরে, একটিতে ডিউটি রুম, থানা ইনচার্জের অফিস ও থাকার রুম একটিতে। সৈনিকদের থাকার রুম একটি। এছাড়া একটি মসজিদ ঘর রয়েছে। তবে নেই কোনো হাজত খানা।
আসামি ধরলে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। থানার অবকাঠামোসহ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা গেলে এই নদী পথে চোরাচালান, ডাকাতের আক্রমণ ইত্যাদি অপরাধ দমনে আরো সহায়ক হতো বলে জানান তিনি।
জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ্ জাগো নিউজকে জানান, ঢুষমারা নৌ থানা পুলিশের অসুবিধার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, নদী পথে ডাকাতের উৎপাত, চোরাচালান এবং বিভিন্ন অপরাধ দমনে নৌ থানা বৃদ্ধিসহ তাদের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে সরকার ইতোমধ্যেই নৌ থানার জন্য আলাদা বিভাগ খুলেছে। ফলে এ থানাটিও তাদের বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নাজমুল হোসেন/এমজেড/এমএস