কুড়িগ্রামের নদীতে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ
কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। নদ-নদী গুলোতে রেকর্ড পরিমাণে ইলিশ আসায় ব্যবসা এবার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। উত্তরের সামীন্ত জেলা কুড়িগ্রামে রয়েছে ছোট-বড় ১৬ নদী। ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, ধরলা ও তিস্তা নদীতে এমন ইলিশের আবির্ভাব আগে কখনো দেখা যায়নি। সামুদ্রিক আর লোনা পানির মাছ বলে চিরাচরিত ধারণাও বদলে গেছে এবার।
পদ্মা-যমুনা ব্রহ্মপুত্র হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ চলে যাচ্ছে ভারতের আসাম রাজ্যে। কিন্তু ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন পয়েন্টে গোপনে শত শত মণ ইলিশ ধরে তা বিক্রি করেছে জেলেরা। প্রকাশ্য বিক্রি করতে না পারলেও গোপনে ইলিশের বাণিজ্য হয়েছে কোটি টাকার। তাই নিষেজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ইলিশের সংখ্যা কমেছে বলে অভিযোগ জেলেদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার যাত্রাপুরের পোড়ারচরে ২০ থেকে ৩০টি ডিঙ্গি নৌকা করে মাছ ধরছে জেলেরা।চর যাত্রাপুরের জেলে হারুন মিয়া, হামিদুল ইসলাম, পোড়ার চরের মাঝি লাল চান, গোয়ালপুড়ি চরের মাঝি শহিদুল ইসলাম জানান, নিষেধাজ্ঞা চলার প্রায় এক সপ্তাহ পর ব্রহ্মপুত্র নদে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ আসে। যেটা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সেসময় অনেক মাঝি কারেন্ট জাল দিয়ে সারারাত মাছ ধরেছে। অনেকেই এক থেকে ৩ মণ পর্যন্ত ইলিশ পেয়েছে। যার ওজন ৪০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম ছিল। তখন ছোট-বড় ইলিশের কেজি ছিল ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর আগের মতো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, সরকারের নিষেজ্ঞা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় ইলিশ সবদিকে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে। এতে করে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এছাড়াও কুড়িগ্রামে ইলিশ সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা নিতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
চিলমারীর মৎস্য আড়ৎদার ফুল বাবু বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও তারা প্রকাশ্যে বেচতে পারেননি। জেলেরা সরাসরি বিক্রি করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩০ মণ ইলিশ চিলমারীর ঘাটে এসেছে।
ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দা রহিমউদ্দিন, করিম ব্যাপারি, এরশাদ আলী জানান, গত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর ছিল নদ-নদীতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এ বছর আকস্মিকভাবে ব্রহ্মপুত্রে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসতে থাকে। যার বেশীরভাগই ছিল ডিমওয়ালা। জেলেরা ডিঙি নৌকায় কারেন্ট জাল নিয়ে রাতভর ইলিশ ধরেছে। এখনও ধরছে ইলিশ। তবে সরকারের উচিত ইলিশ সংরক্ষণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
যাত্রাপুর নৌকার মাঝি সামাদ আলী বলেন, মোটরমাইকেলযোগে শত শত ক্রেতা এসে যাত্রাপুর ঘাট থেকে বস্তা করে ইলিশ নিয়ে গেছেন। এখানে গড়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০টি ডিঙ্গি নৌকা মাছ ধরছে।
যাত্রাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান,ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্রহ্মপুত্রে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় মূলত ইলিশ ছুটে এসেছে ব্রহ্মপুত্রেসহ অন্যান্য নদ-নদীতে। এতে করে অভাবী এলাকার মানুষজন স্বল্প খরচেই ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারছেন। নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন করা গেলে ভবিষ্যতে এমন ইলিশের আরো আবির্ভাব ঘটবে এবং জেলার অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য বিভাগ ২২ দিনে ১১টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৫২টি অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ইলিশ মাছ আটক করা হয় ৫৭৭ কেজি, জাল নষ্ট করা হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার মিটার যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। জরিমানা করা হয় ৫ হাজার টাকা এবং চিলমারীতে জেল দেয়া হয় ২ জনকে। জেলায় কার্ডধারী জেলের সংখ্যা ১৭ হাজার ৬৪৩ জন।
নাজমুল হোসেন/এফএ/আইআই