বিষাক্ত বর্জ্যে হালদার পানি দূষিত : ঝুঁকিতে মৎস্য প্রজনন
বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে দুষিত হচ্ছে হালদার পানি। সুপেয় পানি সংকটে পড়তে পারে চট্টগ্রামের ৭০ লক্ষ মানুষ। হালদা পাড়ের একশ্রেণির পরিবেশ অসচেতন মানুষের অব্যাহত বর্জ্য ফেলার কারণে হালদার স্বচ্ছ পানি এখন পুঁতি দুর্গন্ধময়। এছাড়া হালদার মৎস্য প্রজননের স্থানগুলোও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দখল আর দূষণে হালদা নদীর প্রাণ বর্তমানে যায় যায় অবস্থা। হালদার পাড়ে বিষাক্ত দুর্গন্ধময় বর্জ্য আর একশ্রেণির দখলবাজদের কবলে পড়ে একসময়ের শীতল হালদা এখন অস্থির হয়ে উঠছে। হালদার পাড়ে এক সময় মানুষ বিশুদ্ধ নিশ্বাস নিতে ছুটে গেলেও এখন আর বিশুদ্ধ নি:শ্বাস নিতে পারেনা আশপাশের মানুষ।
হালদা নদীর ফটিকছড়ি অংশ এখন দখল আর দূষণের কবলে পড়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছে। বিষাক্ত বর্জ্যের অত্যাচারে শীতল হালদা এখন আর বিশুদ্ধ বাতাস দিতে পারছেনা হালদা পাড়ের মানুষদেরকে। স্থানীয় সূত্র এবং পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ফটিকছড়ির নাজিরহাট বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে হালদা পাড়ে গরু জবাই করার পর গরুর বিভিন্ন প্রকার বর্জ্যে ফেলা হচ্ছে অবাধে। এছাড়া নাজিরহাট বাজারের সমস্ত ময়লা আবর্জনাগুলোও ফেলা হয় হালদায়।
বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে মাছ বাজারের ময়লা, কাঁচা বাজারের ময়লাসহ সকল প্রকার ময়লার নিরাপদ স্থান হচ্ছে হালদার পাড়! ময়লাগুলো ফেলার পর এগুলো ধীরে ধীরে হালদার পানিতে পতিত হয়ে পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এছাড়া আবর্জনাগুলো পচে হালদার পানির সাথে মিশে হালদার স্বচ্ছ পানিকে করছে বিষাক্ত। সূত্র জানায়, জোয়ার ভাটার হালদায় এসব বর্জ্য পানিতে মিশে নিচের দিকে চলে যায়। যতই নিচে যায় ততই পুরো হালদার পানিই হয় দূষিত।
নাজির হাট বাজারের ব্যবসায়ী মো. নজরুল জানান, বাজারে ময়লা ফেলার নির্ধারিত ডাস্টবিন না থাকায় ব্যবসায়ীরা ময়লাগুলো হালদার পাড়ে ফেলে। তিনি জানান, এতে হালদার পানি দূষিত হলেও বাধ্য হয়েই তারা হালদায় ময়লা বা বর্জ্য ফেলে।
ব্যবসায়ী আইয়ুব জানান, বাজারের সমস্ত ময়লা হালদার পাড়ে ফেললেও হালদা দূষণ হচ্ছে এ ব্যাপারে তাদের কোন ধারণা ছিলনা। এছাড়া বাজার কমিটি বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে কোনভাবে সচেতন করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হাকিম জানান, বিষাক্ত বর্জ্য হালদার পানিতে মিশে পানি দূষিত হওয়ার কারণে হালদা পাড়ের যেসব মানুষ হালদার পানি ব্যবহার করে তাদের মধ্যে এলার্জি, চর্মরোগসহ নানা ধরণের জটিল রোগের সংক্রমণ দেখা যায়।
এদিকে একশ্রেণির দখলবাজদের কবলে পড়ে ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে হালদার প্রস্থ। বাঁশের দোকান বা বাঁশ স্টক করা, লাকড়ির দোকান, গাছের স্টকসহ নানা অজুহাতে দিন দিন হালদাকে গ্রাস করছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। এতে করে হালদার অস্তিত্ব অনেকটা বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হালদা বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদায় যেহেতু জোয়ার-ভাটা আছে সেজন্য নদীর উপরিভাগে কোন বর্জ্য বা ময়লা পড়লে তা পুরো নদীর পানিকেই বিষাক্ত করে তোলে। এছাড়া চট্টগ্রামের ৭০ লক্ষ বসবাসকারীর সুপেয় পানির একমাত্র ভরসা হালদা নদী।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা হালদার পানি দিয়েই চট্টগ্রামের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। হালদায় বর্জ্য ফেলা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রামের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে। এছাড়া হালদায় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র বিলুপ্তিসহ পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা । খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
এসএইচএস/আরআই