বনলতার শহর নাটোর
প্রেমের কবি, ভালোবাসার কবি জীবনানন্দ দাশ। বিষাদময় জীবনের ধূসর জগতে কবি জীবনানন্দ হেঁটেছেন হাজার বছর ধরে। আজন্ম নিভৃতচারী কবি বিষণ্নতায় ডুবে থেকে দেখেছেন বাংলার ধূসর সবুজ বৃক্ষের ডালে হলুদ পাখি। শুনেছেন ঘুঘুর ডাক। দেখেছেন শরতের শুভ্রতায় লীন হওয়া ভোরের আকাশ, বিষণ্ন গাঙচিল কিংবা জোনাক জ্বলা নির্জন সন্ধ্যা। ঘুরেছেন সিংহল সমুদ্র, মালয় সাগর, বিদর্ভ নগরীর পথে পথে। ক্লান্ত প্রাণ কবিকে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
বনলতা সেন কবিতাটি বাংলার মাটি, মানুষ ও নিসর্গ নিয়ে তার মায়াবী কলমে লেখা বর্তমান ও অতীতের সমস্ত প্রিয়তমাদের মুখ। রোম্যান্টিকতায় ভরপুর এই নামটি হৃদয়ে দোলা দেয় অজান্তেই। বনলতা কি রক্তেমাংশে গড়া কোনো রমনী নাকি শুধুই কবির কল্পনা? তা এখনো গবেষণার বিষয় হলেও সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন বনলতা সেন নামক কবিতা অমরত্ব দিয়েছে কবিতার স্রষ্টা জীবনানন্দকেও। সেইসঙ্গে নাটোরও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে স্ব-মহিমায়।
কবি শামীম হোসেন জানান, কবি জীবনানন্দ দাশের অপার সৃষ্টি ‘বনলতা সেন’ নামক কবিতা। ‘বনলতা সেন’ শান্তির এক রহস্যময় চিত্রকল্প। কিন্তু কে এই স্বপ্নকন্যা বনলতা? তার সম্পর্কে কবি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বনলতা সেন নামে বাস্তবে কেউ ছিলেন কিনা সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি আজও। তবে বনলতা সেন নামক কবিতায় কবি নারী চিত্র অঙ্কন করতে যে উপমা ব্যবহার করেছেন তা বাংলা কবিতার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে আজও। সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী নাটোরকে কবি পরিচিত করে তুলেছেন একটি মাত্র কবিতার মাধ্যমে।
কবি মাকিদ হায়দার বলেছেন, বনলতা সেন কবিতাটি নাটোরকে আশ্রয় করে লেখা। একটি প্রতীকী মেয়ের নাম হলো বনলতা। জীবনানন্দ দাশ একাধিক প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা লিখেছেন। কিন্তু বনলতা সেন এমন একটি কবিতা যা পাঠকদের নাড়া দেয়। সেইসঙ্গে নাটোরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে স্ব-মহিমায়।
কলেজ শিক্ষার্থী নাওমী রিভি বলেন, বনলতা সেন নামক কাল্পনিক চরিত্রের কারণে নাটোরের মেয়ে হিসেবে তিনি গর্ববোধ করেন। কারণ বাড়ি নাটোর শুনলে সবাই তাকে বনলতা সেনের এলাকার মেয়ে হিসেবে সম্বোধন।
লালন শিল্পী ও নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, বনলতা সেন এমন একটি কালজয়ী কবিতা যেটা পড়েনি এমন মানুষ নেই। বনলতা সেন শান্তির প্রতীক। সৌন্দর্যের প্রতীক। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে 'বনলতা সেন স্কয়ার' করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
১৯২৭ সালে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয়। নিভৃতচারি এই কবি ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প লিখেছেন। ১৮৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন কবি জীবনানন্দ দাশ। প্রায় গতিহীন একটি ট্রামের নিচে পড়ে কোলকাতায় ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কবির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। আজ কবি জীবনানন্দের ৬৩তম প্রয়াণ দিবসে কবির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী।
রেজাউল করিম রেজা/এফএ/এমএম