রাঙ্গামাটিতে সওজ-এর উচ্ছেদ আতঙ্কে স্থানীয়রা
রাঙ্গামাটির সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছেন শহরের কলেজগেট এলাকার সওজ সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের ভোগদখলীয় জমিতে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দারা। বিভাগীয় জায়গা উদ্ধার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওই বিভাগের সম্ভাব্য উচ্ছেদ অভিযানের কবলে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে এ কথা জানান আতঙ্কগ্রস্ত লোকজন।
খোঁজ নিয়ে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটির সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনেক কর্মচারী সওজ এর আয়ত্বের বাইরে এবং কর্তৃপক্ষের কোনো আপত্তি বা মালিকানার দাবি-দাওয়া নেই মর্মে উল্লেখ করে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এলাকার বহু লোকের কাছে গোপনে জায়গা বিক্রি করায় এ পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনেক জমি বেহাত হয়ে গেছে। এছাড়াও নানাভাবে বেদখল হয়ে গেছে আরও অনেক জমি। ওইসব বেহাত হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাঙ্গামাটির সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
এতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী জনগণ পড়েছেন হুমকির মুখে। অথচ তাদের নিজেদের জমি দীর্ঘদিনের ভোগ-দখলে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাইরে। সেগুলোর বেশিরভাগ জমিই ১২০ ফুট লেভেলের নিচে কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমির শ্রেণিভুক্ত।
ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আহমদ কবির, মো. জামাল উদ্দিন, মো. সিরাজুল ইসলাম, হেমন্ত কুমার চাকমা, কাশেম, হালিম ড্রাইভার, সাদেক, সিরাজুল ইসলাম (ড্রাইভার) নিরঞ্জন, সঞ্চয়সহ অনেকে জানান, আজ থেকে অন্তত প্রায় ৪০ বছর আগে ওই এলাকাটি যেসময় ‘আউলিয়া নগর’ নামে পরিচিত ছিল তখন জায়গাটি কাপ্তাই হ্রদের জলমগ্ন ও জলেভাসা জমি হিসেবে চাষাবাদের উপযোগী ছিল। ওইসব জলেভাসা জমির উন্নয়ন, ভরাট ও সংস্কার করে বর্তমানে বসতবাড়ি করেছেন সে সময়ের আউলিয়া নগরের বাসিন্দারা। মানুষ বেড়ে যাওয়ায় ধানি জমি চাষাবাদের বদলে অনেকে ওইসব জমিতে গাছপালা রোপন, গবাদি পশু লালন-পালন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু ওই এলাকার মানুষ নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করেও অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
তারা আরও বলেন, নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করায় তৎকালীন রাঙ্গামাটি পৌরসভা চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান ওই ওয়ার্ডের কমিশনার আবদুল মতিনকে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই এলাকার মানুষের দুর্দশার কথা চিন্তা করে ২১২২ দাগের জমি খাস হওয়ায় সেখানে একটি এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করে দেন।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ওই এলাকায় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা বসবাস করছেন। সেখানে রয়েছে বাঙালি-পাহাড়ির সব সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, ওই জমি নিয়ে কিছু কুচক্রি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে ২১২২ দাগের জমি বেদখলে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছনি। ওই এলাকার মানুষ প্রায় সবাই গরিব, নিরীহ ও ভূমিহীন।
এলাকার লোকজন বলেন, আমরা এখানে যারা বসবাস করি সবাই খাস ও জলেভাসা জমিতে দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে বসবাস করে আসছি। এর আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তিন দফায় সরকারিভাবে আমিন-কানুগো দিয়ে জমি জরিপ করেছেন।
প্রত্যেকবার সার্ভেয়ার বলেছেন, ২১২২ দাগের জমি খাস এবং সওজের বাইরে। সার্ভেয়ারের রিপোর্ট মতে আমরা বসবাসকারী সবাই সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমির সীমানার বাইরে। এরপরও সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে এটা তাদের জমি। আমরা ভূমিহীন সবাই মৌজাপ্রধানের সুপারিশ নিয়ে বন্দোবস্তীর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কারও কোনো জমি দখলে নেয়নি। কিন্তু এলাকার বহু মানুষ এ বিভাগের জায়গা দখল করে আছেন। এ নিয়ে আমরা জরিপ শেষ করেছি। এখন বাউন্ডারি ওয়াল দেয়া হবে। ওয়ালের ভেতর কেউ পড়লে দখল ছেড়ে দিতে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হবে। এরপরও দখল না ছাড়লে আইনগতভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জমি দখলমুক্ত করা হবে। এজন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে।
সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআই