বালুখালী ক্যাম্পে স্থান পাচ্ছে নতুন ২০ হাজার রোহিঙ্গা
নো ম্যান্স ল্যান্ডে বিজিবির প্রতিরোধের মুখে আটকা পড়া প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ক্যাম্পে নেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিজিবির সহায়তায় তাদের ক্যাম্পে আনা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার নতুন করে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে কৌশলে অনেকেই কুতুপালং, বালুখালী এবং আশপাশ এলাকায় মিশে যায়। তবে বিজিবির কড়াকড়ির কারণে প্রায় ২০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আটকা পড়ে। গত চারদিন তারা সেখানেই ছিল। সেখানে বিজিবি, আইএনজিও এবং বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের স্বজনরা তাদের খাদ্য সরবরাহ করে। এখানে অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিল তারা। থেমে থেমে ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করা এসব রোহিঙ্গা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে বেকায়দায় পড়ে অনেক পরিবার।
এ বিষয়ে বিজিবি কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ বলেন, বুধবার রাতে তাদের সরিয়ে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়া যায়। নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের কড়া পাহারায় নিয়ে আসা শুরু হয়। এ কার্যক্রমে আরআরসি, ইউএনএইচসিআর এবং আইওএমসহ কয়েকটি সংস্থা সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং রোগ প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ডা. মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, নতুন করে আসা সাড়ে ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা খাওয়ানো হয়েছে। শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না বলে এমআর এবং ওভিবা নামে ২টি টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি। নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১৫-২০ হাজারের মতো বলে ধারণা করেন তিনি।
সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ও ঘুমধুম এলাকায় রাখা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ৫০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত আইএনজিও এসিএফের ডিপিএম ইসমাইল ফারুক মানিক জানান, গত চার দিন ধরে প্রায় ২৫ হাজারের মত খিচুড়ির প্যাকেট তারা এখানে বিতরণ করেন। খিচুড়ির পাশাপাশি পুষ্টি সমৃদ্ব বিস্কুট বিতরণ করা হয়। ইউএনএইচসিআরসহ বেশ কিছু সাহায্য সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে। আর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করেছে।
পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা মামুন নিলয় জানান, সকাল থেকে নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে রোহিঙ্গাদের সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের বালুখালি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও জেলা প্রশাসনের রোহিঙ্গা বিষয়ক মুখপাত্র খালেদ মাহমুদ বলেন, নতুন কোনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আনার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে কাউকে আনা হয়ে থাকলে তারাও অন্যদের মতো মানবিক সহায়তা পাবে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম