দুই চোখ উৎপাটনের বর্ণনা দিলেন শাহজালাল
পুলিশ কর্তৃক দুই চোখ উৎপাটনের বর্ণনা দিলেন খুলনার খালিশপুর নয়াবাটি রেললাইন বস্তির বাসিন্দা মো. শাহজালাল। রোববার খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
শাহজালাল বলেন, চোখ উৎপাটন মামলা তুলে তুলে নেয়ার জন্য পুলিশ প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।
তবে পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দায় অস্বীকার করে শাহজালালকে একজন ছিনতাইকারী ও একাধিক মামলার আসামি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শাহজালালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাদীপক্ষের আইনগত সহায়তাকারী সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের অ্যাডভোকেট মিনা মিজানুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকবার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খান অন্যান্য অফিসারদের নিয়ে অন্যায়ভাবে আমাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। আমার পরিবারের কাছে চাঁদা না পেয়ে ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ গাড়িতে তুলে বিশ্ব রোডের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।
সেখানে নির্মম নিযার্ততন করে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে দুই চোখ উপড়ে ফেলে আমাকে চিরতরে অন্ধ করে দেয়। এরপর গভীর রাতে (১৯ জুলাই রাত ৩টা ৪৫ মিনিট) সুমা আক্তারকে বাদী করে আমার বিরুদ্ধে একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করে এবং আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলে রেখে যায়। আমার গ্রামের বাড়ি কাউখালি থানায় একটি আত্মহত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চরম অমানবিক আচরণ করে।
এরপর আসল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওসি আমাকে সন্ত্রাসী, হত্যাকারী, ধর্ষক, নারী নির্যাতনকারী, ডাকাত নামে অপপ্রচার চালাতে থাকে। বিচার চেয়ে আমার গর্ভধারিণী মা রেনু বেগম বাদী হয়ে ওসিসহ ১৩ জনকে আসামি করে গত ৭ সেপোটম্বর সি এম এম আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার নং-সি আর-৩০৯/১৭।
আদালত আরজি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিআইবি) নির্দেশ দেয়। আমরা আশা করেছিলাম মামলার তদন্ত চলাকালে ওসিকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হবে, কিন্তু সেটা হয়নি। বর্তমানে ওসি নাসিম খান আমার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেয়। আমরা প্রত্যাখ্যান করায় বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে এবং আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে। ফলে আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
সংবাদ সম্মেলনে শাহজালালের পচন ধরা চোখের সুচিকিৎসা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরে খালিশপুর থানা পুলিশ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি খুলনা প্রেসক্লাবে পাঠায়। সেখানে বলা হয়- চোখ উৎপাটনের সঙ্গে পুলিশ জড়িত নয়। বরং গত ১৮ জুলাই কলেজ ছাত্রী সুমা আক্তারের ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাইকালে স্থানীয় জনতা শাহজামাল ওরফে শাহজালাল, ওরফে শাহা ওরফে জীবন ওরফে লিটন ওরফে আকাশকে গণপিটুনি দিয়ে চোথ তুলে রাস্তায় ফেলে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ছিনতাইকারীকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা রয়েছে এবং দুটি মামলায় সাজা প্রদান করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ আরও উল্লেখ করেছে যে, গত ২৫ জুলাই কাউখালী উপজেলার মাসিক আইনশৃংখলা কমিটির সভায় শাহজামালকে একজন চিহ্নিত অপরাধী হিসেবে রেজুলেশন করা হয়। এছাড়া গ্রামের বাড়ী পারসাতুয়া ইউপি চেয়রম্যানও প্রত্যয়ণপত্রে শাহজামালকে অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
তবে এসব অভিযোগ সম্পর্কে শাহজালালের পরিবার বলেছে- চোখ উৎপাটনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওসি এসব নাটক চালিয়ে যাচ্ছেন।
আলমগীর হান্নান/আরএআর/আরআইপি