পুলিশ ধরে ছেড়ে দেয়ার পর যুবকের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে পুলিশ ধরে ছেড়ে দেয়ার পর বিশ্বজিৎ চন্দ্র দে (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি ২/৩ দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. রফিকুল হাসান গণি।
মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ অফিসে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে নালিতাবাড়ীর ঘটনাটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, সোমবার বিকেলে শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে নিহত বিশ্বজিৎ চন্দ দে’র মরদেহের ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে রাতে নালিতাবাড়ী পৌর মহাশ্মশানে লাশের সৎকার করা হয়।
নালিতাবাড়ী থানা হাজতের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ প্রজেক্টরে দেখিয়ে পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি বলেন, পুলিশ হেফাজতে কিংবা পুলিশের নির্যাতনে বিশ্বজিৎ দে’র মৃত্যু হয়নি। থানা হাজতে থাকার সময় তাকে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে দেখা যায়। রোববার রাত ৮টার দিকে তাকে হাজতে নেয়ার পর ১০টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত সে হাজতে ছিল। পরে স্বাভাবিক অবস্থায় রাত ১০টা ৩১ মিনিটে তাকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হলে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে সে থানা থেকে বের হয়ে যায়।
কিন্তু কিছু কিছু মিডিয়ায় পুলিশ হেফাজতে, কেউ কেউ পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর রিপোর্ট করায় প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে সেইদিনের ভিডিও ফুটেজ সাংবাদিকদের দেখাতে এ প্রেসব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিশ্বজিতের মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। তার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জন তিন সদস্যের বোর্ড করে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন। ময়নাতদন্তে প্রাথমিকভাবে তার গায়ে কোনো আঘাত কিংবা নির্যাতনের চিহ্ন পাননি। তবে মৃত্যুর কারণও তারা জানাতে পারেননি। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
গত রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মাদকবিরোধী অভিযানে যাওয়ার সময় নালিতাবাড়ী শহরের তারাগঞ্জ উত্তর বাজারের চায়ের দোকানের সামনে থেকে বিশ্বজিৎ দে’কে আটক করে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের এএসআই সুমন।
রাত ১০টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সুপারিশে মুচলেকা নিয়ে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। রাত ১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তাকে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নালিতাবাড়ী শহরে নিহত যুবকের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
হাকিম বাবুল/এএম/এমএস