ইনানী সৈকতে রোহিঙ্গাবাহী ট্রলারডুবি : এখনো নিখোঁজ ৬০ জন
কক্সবাজারের টেকনাফ সৈকতে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হতে না হতেই এবার ইনানী সৈকতের পাটুয়ারটেক এলাকায় রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার ডুবিতে ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো আরও ৬০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছেন উদ্ধার হওয়া লালু মাঝি (৪৮) নামে এক রোহিঙ্গা।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রচণ্ড বাতাসের কারণে রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলারটি পাথরে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়।
লালু মাঝি আরও জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাতে বুচিদং সদর এলাকার প্রতিবেশী ১০০ নারী-পুরুষ ও শিশু নাফনদীর মিয়ানমার সীমান্ত থেকে একটি ট্রলার করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিল। বিকেলে তারা বাংলাদেশ সীমানায় পৌঁছালে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে। এতে ঢেউয়ের তীব্রতাও বেড়ে যাওয়ায় মাঝি ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। তাই ট্রলারটির গতিপথ পরিবর্তন করে উপকূলের দিকে আসলে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে বিকট আওয়াজ করে ডুবে যায়। এ সময় কে কোথায় চলে গেছে জানেন না। সাঁতরে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় তারা কূলে আসে।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক জহুর আলম বলেন, ইনানী পাথুরে সৈকতের পাতুয়ারটেক এলাকায় বিকট আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা সেদিকে দৌড়ে যায়। ট্রলার ডুবির বিষয়টি বুঝতে পেরে একজন অপর জনকে খবর দেয়। তখন তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ১০ জন কর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তাদের সাথে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ এবং পরে কোস্টগার্ডও যোগ দেয়। তারা তৎপরতা চালিয়ে ২৬ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করে। উদ্ধার করা হয়েছে ৯ জন শিশু ও ৫ নারীর মরদেহ। জীবিতদের ভাষ্যমতে এখনো ৬০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
স্থানীয় উদ্ধারকারী খলিল আহম্মদ, মোজাফফর, মোস্তাক জানান, বেঁচে যাওয়া ২৬ জন রোহিঙ্গার ১৭ জনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে উখিয়া থানা পুলিশ।
বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা জাফর বলেন, আমরা সারাদিন ট্রলারে ছিলাম। কিছু খেতে পারিনি।
তিনি জানান, টেকনাফের জাহাজপুরার এলাকার হানিফ তার বোটটি নিয়ে মিয়ানমার গিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসে।
উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) কাই কিসলো জানান, সাগরে তিনটি ট্রলার ডুবে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৪ জন রোহিঙ্গা নারী-শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জন শিশু ও ৫ জন নারী রয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের, উখিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিবলী নোমানসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সাগর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটছে। রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবিতে টেকনাফ ও আশপাশ এলাকা থেকে এ পর্যন্ত অন্তত দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম