তুমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গাদের গ্রামে আগুন, গুলির শব্দ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার এলাকা থেকে ১০ রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারও রোহিঙ্গা। গত ২৬ দিন তারা সেখানে অবস্থান করছেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় তুমব্রু রাখাইন স্টেটে আগুন দেয়ার দৃশ্য জাগো নিউজের ফটোসাংবাদিক বিপ্লব দিক্ষীতের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এ সময় ওই সীমান্তে অবস্থান করছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, তুমব্রু সীমান্তে পাহাড়ের ঢালু অঞ্চলে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমানারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কোনো বেড়া নেই। বরং ঢালু পাহাড় থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে সিঁড়ি। মাঝে নো-ম্যানস ল্যান্ড। সীমান্তঘেঁষে মিয়ানমারের ওপারের প্রথম গ্রামটির নাম তুমব্রু রাখাইন স্টেট।
বাড়িতে আগুন দেয়া ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা নাসিমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ২৫ আগস্টের পর আমরা বাড়িঘর ছেড়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান নেই। মাঝে মধ্যে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘর দেখে আসতাম। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে হঠাৎ করে মগারা (মগ) এসে বাড়িঘরে আগুন দেয়। এর আগে সেনাবাহিনী এসে গুলি করে। নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যাই।
‘আমার সবকিছু মগারা পুড়িয়ে ছাই করে দিল। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছাড়া করেও তারা ক্ষান্ত দেয়নি। এবার আগুন দিয়ে সব শেষ করে দিল’- চিৎকার করে নো-ম্যানস ল্যান্ডে গড়াগড়ি করতে থাকেন নাসিমা খাতুন।
নাসিমা খাতুনের চার মেয়ে ও পাঁচ ছেলে। তারা হলো- মেয়ে মনোয়ারা, হামিবা, নাসরিন ও হাসিনা খাতুন; ছেলে ইকবাল, কামাল, রিয়াজ ও আলাউদ্দিন। অপর ছেলের নাম জানা যায়নি।
নো-ম্যানস ল্যান্ডে পাঁচ/ছয়দিন অবস্থান করা শাহাবুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, পরিবার ধরে পাঁচ-ছয়দিন এখানে আছি। বার্মায় (মিয়ানমারে) মারা যাওয়ার চেয়ে, এখানে মরাই ভালো। তারা তো মানুষ না। গুলি করে হত্যার পর পুড়িয়ে লাশ গুম করে ফেলছে।
আগুনের দৃশ্য দেখিয়ে তিনি বলেন, ওই গ্রামে কারও বসবাস ছিল না। এরপরও তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ সদস্যসহ বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’র নামে রাখাইন রাজ্যে নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে আগুন দেয়ার মতো ঘটনা ঘটায়।
২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা চার লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের স্রোত এখনই থামবে না। এ সংখ্যা আরও কয়েক লাখ ছাড়াবে। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন সঙ্কটের মুখোমুখি রোহিঙ্গারা, অন্যদিকে সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও।
গত ২৬ দিনে রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার সুরাহা হলেও অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এগুলো সরবরাহের ব্যবস্থা না করা হলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা।
তবে প্রশাসন বলছে, তারা ধীরে ধীরে পরিস্থিতি গুছিয়ে আনছেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলেও জানান প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এআর/এমএআর/জেআইএম