স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে কলেজছাত্রী
শেরপুর সদর উপজেলার পূর্ব আলিনাপাড়া গ্রামে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আরিফুজ্জামান সোহাগের বাড়িতে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে শুক্রবার থেকে আমরন অনশন করছেন এক কলেজছাত্রী। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আইজিপি, ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) ও এডিশলান আইজি (এসবি) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ওই কলেজছাত্রী।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার পূর্ব আলিনাপাড়া (খালপাড়) গ্রামের মৃত আনিছুর রহমান দুলালের ছেলে পুলিশের এএসআই মো. আরিফুজ্জামান সোহাগ (এসবি ঢাকা, বিপি-৮৮০৭১২৮৭৪৭) পার্শ্ববর্তী আন্ধারিয়া নয়াপাড়া গ্রামের ব্যাংকার মিজানুর রহমানের মেয়ে শেরপুর সরকারী কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার মেরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাঙ্গাইলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গোপনে বিয়ে করেন।
কিন্তু আরিফুজ্জামানের ছোট বোনের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা করে তারা। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থান থেকে ওই শিক্ষার্থীর বিয়ের প্রস্তাব এলে তিনি আরিফুজ্জামানকে তাদের বিয়ের বিষয়টি সবাইকে জানাতে বলেন এবং শর্তানুযায়ী স্ত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি চান। কিন্তু আরিফুজ্জামান বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইলফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ এসএমএস পাঠান।
এদিকে এএসআই সোহাগ নকলা উপজেলার কামারপট্টিতে নতুন করে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখে বিয়ের দিন ঠিক করেন। এ খবর পেয়ে ওই শিক্ষার্থী মোবাইলের মাধ্যমে আরিফুজ্জামানকে বুঝালেও তা না মানেনি। বরং বিয়ের নির্ধারিত তারিখের আগেই নকলার ওই মহল্লায় ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিয়ে করতে যান এএসআই আরিফুজ্জামান। বিষয়টি জানতে পেরে ওই কলেজছাত্রী শুক্রবার বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে বিষয়টি কনে পক্ষকে জানান। ফলে ওই বিয়ে ভেঙে যায়। এ সময় কৌশলে এএসআই সোহাগ বিয়ে বাড়ি থেকে সটকে পড়েন। পরে ওই কলেজছাত্রী এএসআই আরিফুজ্জামানকে না পেয়ে শুক্রবার বিকেল থেকে তাদের গ্রামের বাড়িতে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে অনশন শুরু করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এএসআই আরিফুজ্জামান সোহাগ জানান, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। আমাকে হেয় করার জন্য মেয়েটি নাটক করছে। প্রায় ৬-৭ বছর আগে তারাকান্দি গ্রামের রুহুল নামে টাঙ্গাইল করোটিয়া কলেজের এক ছাত্রের সঙ্গে ওই মেয়েটি প্রেমের টানে শেরপুর থেকে বের হয়ে টাঙ্গাইল গিয়ে আমার সহযোগিতা চায়। কিন্তু ওই সময় আমি তাকে কোনো সহযোগিতা না করায় ওই ছেলেটি তাকে বিয়ে না করে ফিরিয়ে দেয়। এরপর থেকেই মেয়েটি আমার পেছনে লাগে। শুক্রবার আমার বিয়ে ভেঙেছে। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
এএসআই আরিফুজ্জামান সোহাগের বাড়িতে গেলে তার চাচা মঞ্জু মিয়া জানান, সঠিক তথ্য ও বিয়ের প্রমাণ দিতে পারলে আমরা মেয়েটিকে মেনে নেব।
অপরদিকে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবি করা মরিয়ম আক্তার মেরী বলেন, এ বাড়ি থেকে আমার লাশ যাবে, নয়তো আমি স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পাব।
তিনি আরও বলেন, এখানে আসার পর থেকেই সোহাগের চাচা ও আশপাশের লোকজন আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন এবং আমার ব্যাগ, মোবাইল ও টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে কামারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বারী চাঁন বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা পুরোপুরি জানার জন্য আজ রাতে এনিয়ে দু’পক্ষকে ডেকেছি।
শেরপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সদর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
হাকিম বাবুল/আরএআর/আরআইপি