চলন্ত বাসেই ম্লান হলো রূপার আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ওই তরুণীর স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু চলন্ত বাসে ধর্ষকের হাতে ম্লান হয়ে যায় রূপার সেই স্বপ্ন।
এদিকে গত শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর বন এলাকায় চলন্ত বাসে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের ওই তরুণীকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
নিহত রূপার মা হাসনাহেনা বেগম মেয়ের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বুধবার সকালে তাকে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রূপাদের বাড়ির চারদিকে বন্যার পানি। তারপরও আশপাশের শত শত নারী-পুরুষ ওই বাড়িতে গিয়ে তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। অপরাধীরা ধরা পড়ায় প্রশাসনের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন পুরো গ্রামের মানুষ।
নিহতের ছোট বোন মাশরুফা আক্তার পপি বলেন, তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে জাকিয়া সুলতানা রূপা চতুর্থ। বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে ভর্তি হন ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে।
পড়াশোনায় মেধাবী রূপার স্বপ্ন ছিল আইন বিষয়ে পড়ে ভালো আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু সংসারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সংসারের দেখভালের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি তারা দুই বোন চাকরি নেন ময়মনসিংহের ইউনিলিভার কোম্পানিতে।
টাঙ্গাইলে অবস্থানরত রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মোবাইলে জানান, মরদেহ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। তারপর আমরা মরদেহ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হবো।
নিহত রূপা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের জেলহক প্রামাণিকের মেয়ে। ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে পড়ালেখা করার পাশাপাশি ইউনিলিভার কোম্পানির প্রমোশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহ জেলা সদরে।
গত শুক্রবার তিনি বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাসে কর্মস্থল ময়মনসিংহে ফিরছিলেন। এ ঘটনায় টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার পুলিশ বাসটির পাঁচ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে তিনজন গতকাল মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এরা হলেন বাসচালকের সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর। জবানবন্দি নিয়ে রাতেই তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতার অন্য দুজন বাসের চালক হাবিব ও সুপারভাইজার সফরকে নিয়ে খুন হওয়া জাকিয়া সুলতানা রূপার ওড়না, জুতা ও ভ্যানিটিব্যাগ উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে মধুপুর থানা পুলিশের ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমিনুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া ও মো. শামছুল হক আলাদাভাবে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এই পাঁচজন মিলেই চলন্ত বাসে চারদিন আগে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিলেন।
আরিফ উর রহমান টগর/এএম/আরআইপি