ভারতীয় গরুতে কমেছে দেশি গরুর দাম
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রাজশাহীতে আসছে প্রচুর ভারতীয় গরু। এতে কমে গেছে দেশি গরুর দাম। জমজমাট ঈদ বাজারে কোরবানির পশুর দাম রয়েছে ক্রেতা সাধারণের নাগালেই। তবে তাতে হতাশ দেশি গরু পালনকারীরা।
জানা গেছে, রাজশাহীর চরখানপুর, মাঝারদিয়াড় ও ইউসুফপুর বিট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের অহেদপুর, রঘুনাথপুর এবং ভোলাহাটের চরধরমপুর ও গিলাবাড়ি বিট দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু। রাজশাহী সীমান্তের চেয়ে কয়েকগুন বেশি গরু আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত হয়ে। বড় গরুর পাশাপাশি আসছে ছোট গরুও। এরপর চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায়।
শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর ও রঘুনাথপুর বিট দিয়ে গড়ে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার গরু আসছে। সদ্য চালু হওয়ায় ভোলাহাটের চরধরমপুর ও গিলাবাড়ি বিটে আসছে অন্তত দেড় হাজার করে গরু। আর রাজশাহীর তিনটি বিট মিলিয়ে গরু আসছে হাজারখানেক।
গরু ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, শুল্ক ছাড়পত্রসহ বিটের খরচা বাবদ নির্ধারিত ৫৫০ টাকা নেয়ার কথা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে চার হাজার টাকা করে। খেয়া পারাপারেও বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। আর শুল্ক ফাঁকি দিয়েও গরু আসছে বলে জানিয়েছেন রাখালরা।
তবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গবাদীপশু আসার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন। অতিরিক্ত ফি নেয়ার সুযোগ নেয় বলেও জানান তিনি।
এদিকে রাজশাহী কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের দফতর জানিয়েছে, ২০১৬ সালে কোরবানির ঈদের আগে জুলাই ও আগস্ট মাসে রাজশাহীর ৮টি গবাদিপশু করিডোর দিয়ে এসেছিল ৫৩ হাজার গরু ও ১৬ গাহার ৯৯৩টি মহিষ। চলতি মাসেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট করিডোর হয়ে এসেছে ৫১ হাজার ৪৫৯টি গরু এবং ১০ হাজার ৫৫০টি মহিষ। পাশের ভোলাহাট করিডোর পেরিয়েছে ২২৭টি গরু এবং ৫৫টি মহিষ। আর এ বছর জুলাই থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত আট করিডোর মিলিয়ে এসেছে এক লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮টি গরু। ৩৮ হাজার ৬০০ মহিষ।
গরু ও মহিষ প্রতি ৫০০ টাকা হারে এ দুই মাসে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা। গতবছর এ দুই মাসে রাজস্ব এসেছিল ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ টাকা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর বিটের পরিচালক মানিরুল ইসলাম কালু। তার ভাষ্য, দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নমনীয়তায় বৈধ পথেই আসছে এসবগুলো। এতে চোরাচলান নেই বললেই চলে। কোরবানি সামনে রেখে দেশে আরো গরু আসবে বলে ধারণা তার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সীমান্তের চরবাগডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা শুকুদ্দি (৪০) ও তরিকুল ইসলাম (৩০)। দীর্ঘদিন ধরে গরুর রাখালের কাজ করছেন তারা। রাজশাহীর সিটিহাটের খাটালে ভারত থেকে আনা গরুর পরিচর্যা করছিলেন এ দুজন।
তারা জানান, বৈধভাবেই প্রতিদিন হাজার হাজার গরু আসছে। এনিয়ে দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। জেলা সদরের রামচন্দ্রপুরহাট, শিবগঞ্জের মনাকষা ও তত্তিপুরহাটে ভারতীয় গরু জমজমাট কেনা বেচা। সেখান থেকেই সরাসরি গরু দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যায়।
তবে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রঘুনাথপুর বিটের পরিচালক বাবু বিশ্বাস। তিনি বলেন, তারা কেবলই সরকার নির্ধারিত ফি আদায় করেন। অতিরিক্ত ফি নেয়ার সুযোগ নেই।
একই ভাষ্য জেলার মাঝারদিয়াড় বিটের পরিচালক আনোয়ার হোসেনের। তিনি বলেন, বৈধভাবেই সীমান্ত পেরিয়ে গরু আসছে। শুল্ক ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। পাশের বিওপি ঘেঁসেই রয়েছে তাদের বিট। কাগজপত্র দেখে বিট থেকে গরু বের করছে দিচ্ছে বিজিবি।
তিনি আরো বলেন, এবছর রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে আগের তুলনায় অর্ধেক। তাও আসছে রাজশাহীর সিটিহাটের দিন রোববার ও বুধবারে। মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকছে গরু আসা। সর্বশেষ রোববার এ বিট দিয়ে প্রায় ৩০০ গরু এসেছে। কিছু মহিষও আসছে বিট দিয়ে।
এদিকে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় গরুর একটি বড় অংশ গিয়ে ওঠে রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটিহাটে। নগরীর উপকণ্ঠে অস্থিত এ হাটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতারা। হাটবার ছাড়াও এখানকার বিটে জমা হয় সীমান্ত পেরিয়ে আসা ভারতীয় গরু। এরপর চলে যায় মোকামে।
সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, সিটিহাট ভারতীয় গরু বিক্রির ট্রানজিট। তবে এ হাটে দেশি গরুর বেচাকেনাই হচ্ছে বেশি। আর আগেভাগে যারা ভারতীয় গরু কিনে মোটাতাজা করেছেন তারাও গরু নামাচ্ছেন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/আইআই