ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শান্তিরক্ষায় ছেলে প্রাণ দিয়েছে এটাই বাবার সান্ত্বনা

জেলা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ০৭:২৪ পিএম, ০৭ জুন ২০১৫

বাড়িতে অনেক লোক জড়ো হয়েছেন। এলাকা ছাড়াও কেউ কেউ এসেছেন শহর থেকে। তবে কারোর মুখে তেমন কোনো কথা নেই। কিছুক্ষণ পর গ্রামে একটি হেলিকপ্টার উড়ে আসবে, যার ভেতরে থাকবে সবার প্রিয় নীলকণ্ঠ হাজং। এই নীলকণ্ঠ হাজংয়ের জন্য এলাকাবাসী আজ শোকে কাতর, তেমনি গর্বিত। কারণ বিশ্ব শাস্তি রক্ষায় জীবন দিয়েছে তিনি।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির রাজধানী বামাকোতে গত ২৫ মে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন সেনাসদস্য নীলকণ্ঠ হাজং। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের ঘিলাগড়া গ্রামে। ১৮ মে তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে যান।

রাজেন্দ্র হাজং আর অবন্তি হাজংয়ের চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। রোববার বিকেলে ঘিলাগড়া গ্রামে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

বেলা দুইটার দিকে ঢাকা থেকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে বিমানবাহিনীর নীলকন্ঠ হাজংয়ের মরদেহ নিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বিজিবি’র মাটিরাবন বিওপি’র পাশে অবতরণ করে। পরে জাতীয় পতাকা ও সেনাবাহিনীর পাতাকায় মোড়ানো নীলকণ্ঠের মরদেহ সেনাবাহিনীর সিলেট ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ৩২’বীর’র তত্ত্বাবধানে ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মেহেদীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী একটি দল তার মরদেহটি বহন করে উপজেলার ঘিলাগড়া তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়।

হেলিকপ্টার থেকে সেনাসদস্যরা তার মরদেহ কাঁধে বয়ে নিয়ে নীলকণ্ঠের বাড়ির উঠোনে রাখেন। মা-বাবা, স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন তার মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে সেখানে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তখন।

পরে বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় সেনাবাহিনীর একদল সদস্য তার প্রতি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করেন। এরপর বেলা আড়াইটা শুরু হয় শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা। সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মেহেদীর তত্ত্বাবধানে শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

নীলকণ্ঠ হাজংয়ের বড় ভাই সুরঞ্জিত হাজং জানান, ২০০৩ সালে নীলকণ্ঠ হাজং সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সালে তিনি বিয়ে করেন জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কাইতকোনা গ্রামের সঞ্চিতা হাজংকে। সঞ্চিতা হাজং ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্ব। প্রথম সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি নীলকণ্ঠ।

সুরঞ্জিত আরও জানান, এটাই ছিল তার ভাইয়ে প্রথম শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ। বাবা-মা দুজনই এখন অসুস্থ। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ায় পর থেকে তারা আরও ভেঙে পড়েছেন। তার মামা ইতিন্দ্র হাজং থাকেন ময়মনসিংহ শহরে।

তিনি জানান, মিশনে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যেদিন তিনি ঢাকায় যান সেদিন তার বাসায় দুপুরের খাবার খেয়েছেন। শুটকি ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে পছন্দ করতে তিনি। ঢাকায় যাওয়া-আসার পথে সব সময় নীলকণ্ঠ তার বাসায় উঠতেন। সেদিন অনেক খুশি হয়ে বিদায় দিয়েছিলন। কিন্তু মিশন থেকে এভাবে তিনি ফিরবেন সেটা কেউই কল্পনা করতে পারেননি।

নীলকণ্ঠের সহপাঠী ঘিলাগড়া গ্রামের স্বপ্না রানী হাজং জানান, নীলকণ্ঠ খবুই ভালো ছেলে ছিলেন। শান্ত ও বিনয়ী স্বভাবের জন্য এলাকার সবাই তাকে পছন্দ করত। তার মৃত্যুতে সবাই খুবই কষ্ট পেয়েছ।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা কেউই চিরদিন থাকব না। নীলকণ্ঠ বীরের মতো প্রাণ দিয়েছেন। আমরা তার জন্য গর্বিত।’

 নীলকণ্ঠ হাজংয়ের বাবা ষাটোর্ধ্ব রাজেন্দ্র হাজং বললে, ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। ছেলে শান্তির জন্য, দেশের কাজে নিজের প্রাণ দিয়েছে এইটাই সান্ত্বনা। এই গর্ব, এই সান্ত্বনা নিয়েই আমাদের এখন বাঁচতে হবে।

ছামির মাহমুদ/এসএইচএস