ভারতীয় গরু না উঠলে বন্ধ হয়ে যাবে হাটটি
উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গরু ও মহিষের মোকাম রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ সিটি হাটে কেনা-বেচায় মন্দা দেখা দিয়েছে। প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে গরু না আসায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাটে সরবরাহ কম থাকায় গরুর দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মাংসের দাম মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে কয়েক দফা বেড়েছে। গরু সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে অচিরেই মাংসের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি হাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক হাজার ব্যক্তির জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্রেতা শূন্য হাটে মাত্র কয়েকটি গরু বাঁধা আছে। যে কয়জন গরু কিনতে আসছেন, দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ১০ বছরে সিটি হাটে ভারতীয় গরুর আমদানি ছিল বেশি। এ হাটে শতকরা ৬০ ভাগ ভারতীয় গরু বেচা-কেনা হয়। কিন্তু গত ৬ মাস থেকে হাটে ভারতীয় গরুর সরবরাহ নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে দেশে গরু ঢুকছে না। দেশি গরুই এখন একমাত্র ভরসা।
ভারতীয় গরুর আমদানি না থাকায় গরুর স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। বেড়েছে দাম। ফলে বেচা-কেনা কমে গেছে। গরু কেনার জন্য ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিলা ও নেয়ায়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারিরা আসছেন, কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে তারা কিনতে পারছেন না।
নগরীর উপকণ্ঠ হাজরাপুকুর এলাকার ক্ষুদ্র গরু ব্যবসায়ী হালিমা খাতুন। তিনি প্রায় ৮ বছর থেকে গরুর ব্যবসা করেন। সিটি হাট থেকে প্রতিহাটে দুই থেকে তিনটি ছোট আকারের গরু কেনা হয় তার। এরপর বাড়ি থেকে কিছু লাভে বিক্রি করে দেন। এভাবে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন।
কিন্তু বর্তমানের চিত্র ভিন্ন। তিনি জানান, এখন হাটে গরু আমদানি কম। আগে যেভাবে হাটে গরুর সরবরাহ ছিল, এখন তা নেই। গরু সরবরাহ কম থাকায়, দাম বেড়ে গেছে। ফলে তিনি গরুর কিনতে পারছেন না। এজন্য তার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।
মেহেরপুরের গাংনি উপজেলার হাড়িভাঙ্গা এলাকার গরু ব্যাপারি হাসান আলী। তিনি গরু কিনতে এসেছেন সিটি হাটে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হাটে শুধুই দেশি গরু, ভারতীয় গরু নেই। ফলে গরুর আমদানি অনেক কম। আমদানি কম থাকায় দাম বেশি। এর ফলে বেশি দাম দিয়ে গরু কিনলে এলাকায় গিয়ে বিক্রি করা কঠিন হবে। এ কারণে গরু না কিনেই ফিরতে হবে। এর ফলে আমার কয়েক হাজার টাকার ক্ষতি হবে।
পাবনার সুজানগর এলাকার গরুর ব্যাপারি আবদুল লতিফ বলেন, আমি ২৫ বছর থেকে গরুর ব্যবসা করছি। ১০ বছর থেকে সিটি হাট থেকে গরু কিনে ঢাকা ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। হাটে দেশি গরুর সরবরাহ থাকলেও, ভারতীয় গরু নেই। ফলে দাম বেশি। ভারত থেকে গরু আমদানি না হলে গরুর দাম আরো বাড়বে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকার খামারি আবুল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, হাটে গরুর দাম বেশি হলে খামারিদের লাভ। কিন্তু বিক্রি না হলে কিছু করার নেই।
অপরদিকে গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণে মাংসের দাম মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে। তিন মাস আগে কেজি প্রতি মাংস বিক্রি হয়েছে আড়াইশ টাকায়। বর্তমানে দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। ফলে কেজি প্রতি বেড়েছে ১০০ টাকা করে।
এ ব্যাপারে নগরীর হড়গ্রাম এলাকার মাংস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণে মাংসের দাম বেড়েছে। গরুর দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে আগামি ৬ মাস পর কেজিতে আরো ১০০ টাকা বাড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
এ ব্যাপারে সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু অবিলম্বে ভারতীয় গরু আমদানি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকারকে রাজস্ব দিয়ে আমরা হাট পরিচালনা করি। কিন্তু বর্তমানে হাটের যে অবস্থা, তাতে ইজারার টাকা উঠবে কী না তাতে সন্দেহ রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম পশু হাটটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে সরকারো প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে।
পাশাপাশি এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকার পথ রুদ্ধ হবে। তাই এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এমজেড/আরআইপি