অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি-পুলিশের প্রতিরোধ
আবারও উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। শুক্রবার ভোর রাতে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন ‘আল ইয়াকিন’র সশস্ত্র সদস্যরা সেদেশের সীমান্ত পুলিশের ২০টি ক্যাম্পে হামলার ঘটনার পর এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সশস্ত্র হামলাকারীদের অবস্থানের খবরে মুসলমান অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে সেদেশের সেনা-পুলিশ। ভোর রাত থেকে শুক্রবার সারাদিন থেমে থেমে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের কয়েকটি গ্রামে।
আগের মতো সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রাখাইনরা মুসলমান রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামে ঘরবাড়িতে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। গত বছরের মতো এসব এলাকায় হেলিকপ্টারে ঘুরে ঘুরে দেখছে সেদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ফলে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে আশ্রয়ের আশায় দলে দলে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা চালাচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের চোরাই পথ দিয়ে এসে তারা সীমান্তে অবস্থান নিলেও বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাধার মুখে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়।
শুক্রবার নাফনদী পার হয়ে দেশে অনুপ্রবেশ করা ১৪৬ জনকে আটক করে মানবিক সহায়তার পর মিয়ানমারে আবার ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি সদস্যরা।
উখিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. আবুল খায়ের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, স্থল সীমান্ত পয়েন্ট সমূহে বিজিবি অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে যোগ দিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ জনতা। এ সময় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে সীমান্তে অবস্থান করছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এরপরও কৌশলে দেশে প্রবেশ করে শুক্রবার দুপুরে উখিয়ার বালুখালীর নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নেয় কয়েকজন রোহিঙ্গা।
তারা হলেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের খৈয়ারবিল গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে মো. ইব্রাহিম (২৩), তার ভাই নাছের (১৮), বলি বাজার এলাকার রাজা মিয়ার ছেলে নুরুল আলম (২০), আবদুল হাইয়ের ছেলে শুক্কুর আলী(২২), মোহাম্মদ আলীর ছেলে হোছন আলী (১৯) ও কেয়ারি প্রাং থেকে স্বপরিবারে চলে আসা নুরুল আলম (৪০), তার স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম (২৫)।
তারা জানান, মিয়ানমারের নাইছাদং, মেদাই, ফকিরা বাজার, বলি বাজার, কুমির খালী, জিম্মংখালী, শিলখালী, রাংবাইল্ল্যা, কেয়ামং, চালিপ্রাং, নারাইশং, নাগপুরা, চাকমাকাটাসহ অন্তত ২৫টি গ্রাম মিয়ানমার সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তারা ভীতি সঞ্চার করতে চারদিকে শত শত রাউন্ড গুলি বর্ষণ করছে।
এতে রোহিঙ্গারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পুরুষরা বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশমুখী হলেও অনেকের স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা মিয়ানমারে রয়ে গেছেন।
শুক্কুর আলী জানান, তার ভাই মোহাম্মদ হাশেমকে শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। তাদের বাড়ি ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। তাদের সহায়সম্বল যা আছে তা সেনাবাহিনী ও রাখাইনরা লুটে নিয়ে গেছে।
এদিকে, টেকনাফ ছাড়াও উখিয়ার কুতুপালং এবং বালুখালী নতুন বস্তিতে অন্তত ৬ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রকারী মাঝিদের।
নতুনভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনের আশঙ্কায় এসব এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা আবারও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
গত ১ সপ্তাহে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং এবং টেকনাফের লেদা ও মুছনি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে বলে এনজিও সংস্থার রিপোর্টে বলা হলেও সরকারিভাবে এর কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে কুতুপালং নতুন ক্যাম্প অবস্থানকারী রোহিঙ্গা সিরাজুল হক ও বালুখালী নতুন বস্তির আয়ুব মাঝি ও লালু মাঝি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম জানান, ওপারে সংগঠিত বিচ্ছিন্ন ঘটনার জের ধরে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিল।
কিন্তু বিজিবির কঠোরতায় সারাদিন তারা সীমান্ত অতিক্রম করতে পারেনি। ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মনজুরুল হাসান খান ও টেকনাফ বিজিবি অধিনায়ক মো. এস এম আরিফুল ইসলামও স্ব স্ব দায়িত্বরত এলাকায় কঠোরতা পালন করছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমরা সীমান্ত থেকে ফিরেছি। দিনের মতো রাতেও সীমান্ত পাহারা অব্যাহত রাখা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এএম/আইআই