‘মোর নামটা ন্যাকেন বাবা’
‘মোর নামটা ন্যাকেন বাবা। বন্যাত মোর ম্যালা ক্ষতি হচে। ঘরোত এককোমর পানি উচ্চিলো, তাই ১০দিন থাকি বউ-ছোল নিয়্যা আশ্রয়কেন্দ্রোত আসি আছোম।’ কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের মশামারি গ্রামের আছর উদ্দিন (৬২)। ঘরে এক কোমরের বেশি পানি ওঠায় তিনি আশ্রয় নিয়েছেন কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার। মঙ্গলবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ওই আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে মানুষের ভোগান্তির চিত্র। একটি শ্রেণিকক্ষে দুই থেকে তিনটি পরিবার গাদাগাদি করে থাকে। বন্যা শুরুর পর ওই আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আবার অনেকেই চলে গেছে বাড়িতে। সাংসারিক কাজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি রাখা হয়েছে স্কুল চত্বরে।
এসময় আছর উদ্দিন আরও জানান, বন্যার পর থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে শুধু এককেজি চিড়া পেয়েছেন। আর কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মধ্য উড়িয়া গ্রামের দুলাল মিয়া (৩০) বলেন, দুপুরে এখনো খাইনি। সকালে কচু ভর্তা দিয়ে ভাত খাইছি। গতকাল রাতে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত ও দুপুরে চিড়া খেয়েছি। কয়েকদিন দুইবেলা করে খেয়েছি। একবেলা উপোষ থাকতাম। ঘর ও গোয়ালঘরে একবুক পানি উঠছিল। তাই দুইটি গরু নিয়ে আটদিন হলো আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। এরইমধ্যে ২০ হাজার টাকা ধানের উপর ঋণ নিয়েছি। তার জন্য আমন ও ইরির মৌসুমে ৫ মণ করে ধান দিতে হবে। ভেবে পাচ্ছি না এখন কী করবো। কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
চরকাবিলপুর গ্রামের শাহিদা বেগম (৩২) জানান, বিকেলে নদীতে তেমন পানি ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই রাতে পানি চলে আসে। নদীর পাশে বাড়ি হওয়ায় নৌকা আসার আগেই ঘরের কিছু জিনিসপত্র এবং ৫টি হাঁস ও তিনটি মুরগি পানির স্রোতে ভেসে গেছে। কোনোমতে গরু নৌকায় উঠাতে পেরেছি। তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। বন্যায় খাওয়া খরচের জন্য ১০ হাজার টাকা ধার নিতে হয়েছে।
উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত বন্যায় ১০ মেট্রিক টন চাল ও ২০০ প্যাকেট চিড়া বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৬ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে। সেগুলো বিতরণের কাজ চলছে।
রওশন আলম পাপুল/এফএ /আইআই