কারাগারে মাদক সেবন : বগুড়া থেকে কাশিমপুরে তুফান
বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে ন্যাড়া করার ঘটনায় আলোচিত নারী নির্যাতন মামলায় বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে বগুড়া থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। জেলখানার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নেয়া, মাদক সেবনসহ আরও নানা অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে স্থানান্তর করা হলো।
বগুড়ার জেল সুপার (তত্ত্বাবধায়ক) মোকাম্মেল হোসেন জানান, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে ৬ সদস্যের একদল পুলিশ কড়া নিরাপত্তা দিয়ে তুফান সরকারকে একটি ভাড়া করা মাইক্রোবাস যোগে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যায়। এই মামলার গ্রেফতার হওয়া অন্যান্য সকল আসামিই বগুড়ার কারাগারে রয়েছে।
এর আগে তুফানসহ অন্য আসামিরা টাকার বিনিময়ে বগুড়া জেলে রাজকীয় জীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি মাদকাসক্ত তুফান জেলে বসেই ফেনসিডিল পাচ্ছে এমন অভিযোগও পাওয়া যায়।
জানা যায়, বিগত এক সপ্তাহ ধরে দর্শনার্থী কক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলেছে তুফান ও তার পরিবারের সদস্যরা। তারা জেলের মেডিকেলে থাকছেন, বাড়ি থেকে দেয়া খাবার খাচ্ছেন।
বগুড়ার জেল সুপার মোকাম্মেল হক বলেন, দর্শনার্থী কক্ষে পাইপ দিয়ে তুফানকে ফেনসিডিল খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এছাড়া প্রাচীরের বাইরে থেকে ফেনসিডিল ভেতরে নিক্ষেপ করা হলেও সেটা কার জন্য তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বগুড়া কারাগারের চারপাশে সিকিউরিটি ক্যামেরা থাকার পরও এমন ঘটনা কী করে ঘটলো সেই তথ্য জানাতে পারেনি জেল সুপার।
সম্প্রতি বগুড়া জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়া কয়েকজন হাজতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেলে আসার পর থেকেই তুফান, রুমকিসহ অন্য আসামিদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। তাদের জন্য কয়েকজন কারারক্ষী নিয়োগ করা হয়। প্রথম ২-৪ দিন তারা জেলের খাবার খেলেও পরবর্তীতে বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খান।
জেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় তুফান সরকার ও অন্যরা দর্শনার্থী কক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার সুযোগ পান। ওই সুযোগে দর্শনার্থী কক্ষে স্যালাইনের পাইপের মাধ্যমে তুফানকে ফেনসিডিল খাওয়ানো হয়। এ সময় সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত রক্ষীরা পাহারা দেন।
জানা যায়, গত ১২ আগস্ট দর্শনার্থী কক্ষে তুফানকে ফেনসিডিল খাওয়ানোর সময় রওশন আরা নামে এক নারী কারারক্ষী বিষয়টি হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে জেল সুপারকে তিনি বিষয়টি জানান। এরপর থেকেই প্রাচীরের ওপার থেকে (জেলা খানার সামনের সড়ক) ফেনসিডিলের বোতল নিক্ষেপ শুরু হয়। কারারক্ষীদের সহায়তায় পছন্দের লোকজন বোতলটি তুফানের কাছে পৌঁছে দিতে থাকে।
সর্বশেষ ১৬ আগস্ট বুধবার বিকেলের দিকে দক্ষিণ পাশ থেকে এক বোতল ফেনসিডিল জেলের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় বাবুল নামে এক হাজতি সেটা তুফানের কাছে পৌঁছে দেয়ার সময় এক কারারক্ষী তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এ অপরাধে শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার মাদক মামলার হাজতি বাবুলকে সেলে রাখা হয়েছে।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়া একজন কয়েদি আরও অভিযোগ করেন, গত ৭ আগস্ট নির্যাতিত ছাত্রী ও তার মাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। সেদিনই তুফানকে লকআপ থেকে এনে সুপারের কক্ষে ছাত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়েছে। তুফান নিজেই সাক্ষাতের বিষয়টি জেলের কয়েকজন রক্ষীর কাছে স্বীকার করেছে।
তুফান তাদের বলেছেন, ছাত্রী মামলা তুলে নেবে এবং বিনিময়ে তিনি তাকে বিয়ে করবেন। তবে এই অভিযোগটি একেবারেই মিথ্যা দাবি করে জেল সুপার মোকাম্মেল জানান, দেখা করানো ও জেল মেডিকেলে রাখার প্রশ্নই ওঠে না। প্রয়োজনে যে কোনো তদন্ত করে এ্র সত্যতা যাচাই করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) আসলাম আলী জানান, তিনি ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রী ও তার মাকে কারাগার থেকে বুঝে নিয়েছিলেন। রাতে ডিবি অফিসে রাখার পরদিন সকালে তাদের রাজশাহীতে নিয়ে যান।
হাসপাতাল থেকে কেন তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আদালত থেকে নির্দেশনা ছিল জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মা ও মেয়েকে সেফ হাউজে পাঠাতে হবে। সেই মোতাবেক কাজ করা হয়েছে।
আরএআর/আরআইপি