ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

অদম্য মেধাবী : সাফল্যের পর স্বপ্ন পূরণে দুশ্চিন্তা ওদের!

প্রকাশিত: ০৬:০৩ এএম, ০৪ জুন ২০১৫

ওদের সংসারে নুন আন্তে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। কারো বাবা নেই আবার কারো থেকেও নেই। পড়াশোনার খরচ ভালো মতো না জুটলেও এসব অদম্য মেধাবীদের সাফল্যে শেষ পর্যন্ত কোন কিছুই বাধা হতে পারেনি। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছেন তারা। এদের কেউ স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার হওয়ার কেউবা ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা আইনজীবী হওয়ার। এ অবস্থায় সমাজের হৃদয়বান মানুষের একটু সহযোগিতা পেলে হাতীবান্ধার এসব অদম্য মেধাবীদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের পথ অনেকটাই সুগম হবে।

মাজিদুল ইসলাম:
বাবা রহমত আলী একজন রিকশা চালক। প্রায় বছর খানেক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। সারা দিন রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে রাতের খানিকটা সময় পড়াশোনা করে সেই মাজিদুলই এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছেন। হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ অর্জনকারী মাজিদুল এবার স্বপ্ন দেখছে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার। কিন্তু দারিদ্র্যতার মাঝে ভবিষ্যতের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা এমন শঙ্কা তাড়া করছে তাকে।

মাজিদুল জানান, আমিও রিকশা চালিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু বাধা শুধু দারিদ্র্যতা। তবে অদম্য এই মেধাবীর পাড়াশোনার খরচে সহযোগিতা করলে সে তার ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে বলে জানালেন হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

আল-আমিন :


বাবা আব্দুর রহমান বড়খাতা বাজারে একটি চালার নিচে চা বিক্রয় করে কোন রকমে সংসার চালায়। মা শাহানারা বেগম গৃহিণী। বাড়ি ভিটে বলতে মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে টিনের চালার ঘর করে বসবাস। শুধু চা বিক্রয় করে ৬ সদস্যের পরিবারে খাবার জোটে না ভাল মতো। তাই অতি কষ্টে পড়াশোনা করে আসছেন আল-আমিন। এ বছর হাতীবান্ধা উপজেলা বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে অদম্য এ মেধাবী।

আল-আমিনের বড়ভাই হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজে ও মেজভাই লালমনিরহাটে অনার্স প্রথম র্বষের ছাত্র। তিন ভাইয়ের পাড়াশুনা চালাতে তার বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। দারিদ্র্যতার মাঝে আল-আমিনের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন কি পূরণ হবে এমন শঙ্কা তার।

হোসনে আরা:


বাবা হাফিজুর রহমান বড়খাতা বাজারে মুদির দোকানি। জমিজমা বলতে দোলাপাড়া গ্রামের ৬ শতক জমিতে ভিটেবাড়ি। বড়ভাই এইচএসসির প্রথম র্বষের ছাত্র আর ছোট ভাই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তিন ভাই বোনের খরচ যোগাতে পারে না পরিবার। চরম দারিদ্র্যতার মাঝে পড়াশোনা করে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে আবাক করে দিয়েছে হোসনে আরা।
 
হোসনে আরা জানায়, একদিকে সংসারের অভাব-অনটন অন্যদিকে ভাই-বোনের পড়াশুনার খরচ চালাতে পারে না বাবা হাফিজুর রহমান। তার স্বপ্ন ভবিষ্যতে ভালভাবে পড়াশোনা করে সরকারি চাকুরি করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা শুধু দারিদ্র্যতা।

তানিয়া তাহিদ তানি:


তানিয়া লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব সির্ন্দুনা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবার যা কিছু ছিলে সবই তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। সীমাহীন কষ্টের মাঝে সির্ন্দুনা লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে তানিয়া তাহিদ তানি। এর আগেও সে ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পয়েছে।

তানিয়া জানায়, তার বাবা তাহিদুল ইসলামের বর্তমানে রয়েছে শুধুমাত্র ৩ শতাংশের ভিটেবাড়ি। রেডিও মেকানিক্সের কাজ করে কোন রকমে সংসার চলে তাদের। তানিয়ার স্বপ্ন ভবিষ্যতে ব্যারিস্টার হওয়ার। কিন্তু তার এ স্বপ্ন পূরণের পথেও বাধা দারিদ্র্যতা।

খাদিজা:


লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর ধুবনী গ্রামে জন্ম নেওয়া খাদিজাতুল কুবরা সেলাই মেশিনের আয়ে লেখাপড়া চালিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে হাতীবান্ধা শাহগরীব­ুল্লাহ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ সাফল্য অর্জন করে। সে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। সেলাই মেশিনের ফোঁড়ে ফোঁড়ে খাদিজা স্বপ্ন আঁকে চিকিৎসক হওয়ার।

যদিও তার এ স্বপ্ন পূরণে রয়েছে নানা বাধা ও সংশয়। তারপরেও আত্নবিশ্বাস তার চলার পথে একমাত্র অবলম্বন। কারণ জন্মের ৬ মাস বয়সে সংসারে অভাব অনটন থাকায় তার মা তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় এবং আজো ফিরে আসেনি। অপরদিকে তার বাবা শহিদুল ইসলাম তিস্তা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে কাজ করতেন। আর অসহায় এবং মেধাবী শিক্ষার্থী সব কিছু হারিয়ে থাকেন চাচার এক ভাড়া বাসায়। প্রতিকূলতার মধ্যেও তার সাফল্যে কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

এ ব্যাপারে স্কুল প্রধান শিক্ষক তবিবর রহমান বলেন, ঠিকানাবিহীন মেধাবী শিক্ষার্থী খাদিজার এ সাফল্য অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু ভবিষ্যতে মেয়েটির দায়িত্ব কে নিবে সে ব্যাপারে তিনি চিন্তিত।

এসএস/পিআর