‘আমাদের আগে গরু-ছাগলগুলারে বাঁচান’
‘দুদিন ধরে বাড়িতে সাঁতার পানি। উপায়ন্তর না দেখে ওয়াপদা বাঁধে ৫টি গরুসহ পরিবারের ৯ সদস্যকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। নিজেরা কোনোমতে শাক-পাতা খেয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু গরুগুলোকে খেতে দিতে পারছি না। কোথাও কোন খালি মাঠ নেই, যেখানে নিয়ে গরুগুলোকে খাওয়াবো।’ কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের বাঁধে আশ্রয় নেয়া বয়োবৃদ্ধ তারা মিয়া (৭০)।
বন্যা কবলিত এলাকায় ক্যামেরা ও কলম হাতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলেই তারা ছুটে আসছেন, ভিড় জমাচ্ছেন একটু সাহায্যের আশায়। নিজের নামটা লেখানোর আশায় তারা ছুটে আসছেন। কোনোমতে নামটা লেখাতে পারলে কিছু সাহায্য জুটতে পারে এমন আশা তাদের।
একই এলাকার ওবায়দুল (৪৭) জানালেন, সোমবার বিকেলে বাড়িতে পানি ওঠে। এসময় আমার একটি গাভী বাচ্চা প্রসব করে। কিন্তু বাড়িতে কোন শুকনো জায়গা না থাকায় বাচ্চাটি নদীর পানিতে পড়ে মারা যায়। পরে পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে ওয়াপদা বাঁধে অবস্থান নিয়েছি।
একই সমস্যার কথা জানালেন আবুল হোসেন (৭০)। তিনি বলেন, সোমবার রাতে দেখতে দেখতে বাড়িতে পানি ঢুকে তলিয়ে যায়। রাতেই অনেক কষ্টে পরিবারের ১০ সদস্যকে নিয়ে কোনোমতে ওয়াপদা বাঁধে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছি।
তবে তিনি অভিযোগ করেন, বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি ঠিকই তবে খোলা আকাশের নিচে খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি ও ল্যাট্রিনের অভাবে অনেক কষ্টে আছি পরিবারের সদস্য নিয়ে।
নিজের কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে ভিন্ন কথা বললেন ভিন্নখিচুরীপাড়া গ্রামের মৃত হবিবর আলীর ছেলে আলম। তিনি ও ফরান আলীর ছেলে আমীর হোসেনসহ অনেকেই বললেন, আমাদের খাবার দেয়ার আগে গরু-ছাগলের খাবার দিয়ে বাঁচান। বাড়িঘর পানিতে। টাকা পয়সাও নেই। নিজেদেরই খাবার নেই, গরু-ছাগলকে কী খাওয়াবো। অনেক যত্ম করে গরু-ছাগলগুলো পালন করছি লাভের আশায় সেটাও গুড়েবালিতে পরিণত হতে বসেছে। তিনি দ্রুত দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
খোকশাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মোল্লা বলেন, আমার ইউনিয়নের কমপক্ষে দেড় হাজার বাড়িঘর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। এসব পরিবারের মধ্যে প্রায় চার থেকে পাঁচশ পরিবার ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও দূরত্বের কারণে কেউ সেখানে যেতে চান না। আমার ইউনিয়নে পাঁচ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। বুধবার সকালে দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ব্লিচিং পাউডার মজুত আছে। যা পর্যায়ক্রমে বন্যাতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/আরআইপি