সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি তীব্রগতিতে বাড়ছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ৫টি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার অভ্যন্তরীন করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ জানান, সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের পর এবারই প্রথম যমুনার পানি বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়বে বলেও সিরাজগঞ্জ পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন।
পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাত্র চারদিনের ব্যবধানে ৪০ হাজার পরিবারের আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত মানুষেরা অনেকেই ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। দুই হাজার হেক্টর ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসন থেকে ১৭০ মেট্টিক টন চাল ও নগদ সাড়ে ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বন্যা কবলিতদের হাতে পৌঁছেনি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিক কুমার সরকার জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার যমুনার পানি বৃদ্ধির তীব্রতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০১৬ সালের বন্যায় সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি সর্বোচ্চ ১৪.২৪ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছিল। আর এ বছর জুলাই মাসের প্রথম বন্যায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে সর্বোচ্চ ১৪.১৪ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়। যেটা ছিল বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপরে। অথচ চলতি মাসে দ্বিতীয় দফার বন্যায় চারদিনের মধ্যেই ১২৬ সেন্টিমিটার উপরে এবং গত বন্যার চেয়ে ৪৭ সেন্টিমিটার বেশি। এসব কারণে এবার জেলায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুভগাছা ইউনিয়নের টুটুলের মোড় এলাকার বাসিন্দা শীলা খাতুন, আফজাল হোসেন, সকিতন ভেওয়া ও আব্দুল কুদ্দুস জানান, বসতবাড়ি একেবারে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে গলা পানি। কোনো জিনিসপত্র বের করতে পারি নাই। কয়েকটি টিন খুলে এনে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাওয়ার মতো জায়গা নেই। তাই ওয়াপদার ধারে পলিথিন টানিয়ে কোনো মতে জীবনযাপন করছি। বৃষ্টির কারণে সময় মতো রান্নাও করতে পারি না। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজলায় প্রায় দুই শতাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে জরিপ চলছে। ইতিমধ্যে জেলার ৫টি উপজেলায় ১৭০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে ৮ লা টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, আরও দুই-একদিন পানি বাড়তে পারে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। কোনো অবস্থাতেই যেন বাঁধ এলাকায় কোনো ধস বা ভাঙন সৃষ্টি না হয় সে জন্য পাউবোকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। তারপরও তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে রাখা হয়েছে। সর্বোপরি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য শুকনো খাবার, মোমবাতি, দেয়াশলাই প্যাকেট ইতিমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএআর/জেআইএম