কুড়িগ্রামে ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি, মৃতের সংখ্যা ১২
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। টানা চারদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৬৮সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়ায় দুধকুমর নদীর পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভয়াবহ বন্যা দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ৪ লাখ বানভাসি মানুষ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী আমিনুল ইসলাম।
এদিকে, কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেলপথে টগরাইহাট নামক এলাকার বড়পুল ব্রিজের (১৭ জে/ ৪৫৫-০২) সেতুর গার্ডার ডেবে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সঙ্গে দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী-ফুলবাড়ি মহাসড়কে ধরলা নদীর স্রোতে ৪টি স্থানে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় এই তিন উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বন্যায় ৩ শতাধিক শেল্টার ছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় ও খোলা স্থানে আশ্রিত পরিবারগুলো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও লেট্রিন সমস্যার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
কুড়িগ্রামে পানিতে ডুবে আরও ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চলতি বন্যায় জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ জনে।
সোমবার যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন- ফুলবাড়ি উপজেলার ঘোগারকুটি এলাকার রইচ উদ্দিনের স্ত্রী হালিমা বেগম (৩৫) ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নজরমামুদ গ্রামের মৃত. আবুল হোসেনের ছেলে আজাহার আলী (৭০), নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জে মিজানুরের প্রতিবন্ধী ছেলে আব্দুল করিম ওরফে মনসুর (১৪) ও ফান্দের চর জামাল গ্রামের কোরবান আলীর কন্যা প্রতিবন্ধী ফুলবানু (৩১), ভুরুঙ্গামারীর দেওয়ানের খামার এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে মজিবর রহমান (১৮) এবং উলিপুরের বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকিরপাড়া এলাকার বানভাসা রহমান (৬৫)। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার সকাল থেকে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের ওপর থেকে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সড়কে স্বল্প পরিসরে বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
অপর দিকে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়কের পাটেশ্বরী, মধ্যকুমরপুর ও নাগেশ্বরী পেট্রোল পাম্পসহ চার স্থানে মহাসড়কের ওপর পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বিশেষ করে ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ গত ৩ দিন থেকে বন্ধ রয়েছে। ফুলবাড়ির উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কমন্ডল গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ২০ ফুট অংশ ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বন্যার কারণে গোটা উপজেলায় তিনদিন ধরে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া, নাগদহ, আটিয়াবাড়ি, সুজনেরকুটি ও রাবাইতারীসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের উত্তর কোদালকাটি, পাইকানটারী পাড়া, সাজাই, চর সাজাই, পাখিউড়া, কোদালকাটি, কারিগড় পাড়া , শংকর মাধবপুর ও তেরোরশি পাড়ার সব বাড়িতেই পানি উঠেছে।
তীব্র নদীভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শংকর মাধবপুর গ্রাম। অধিকাংশ মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গায় ও বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ছক্কু জানান।
এদিকে, কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেলপথে টগরাইহাট নামক এলাকার বড়পুল ব্রিজের সেতুর গার্ডার ভেঙে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সঙ্গে দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে বন্যা পরবর্তী সময়ে রেলপথ চালু করা হুমকির মুখে পড়েছে।
বন্যার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভেসে গেছে মৎস ঘের ও পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ। তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে হাঁস-মুরগিসহ জাগদেয়া পাট। বন্যায় ডুবে আছে কয়েকশ একর জমির ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় ৪২ হাজার ৩৯১ হেক্টর জমির বীজতলা, আমন ও শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। গত তিনদিন ধরে এসব ফসল নিমজ্জিত থাকায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে কৃষকরা আশঙ্কায় রয়েছেন।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে ১২ লাখ টাকা বন্যাদুর্গতদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে নতুন করে ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
নাজমুল হোসাইন/এএম/এমএস